ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১

অনিরীক্ষা হিসাবে অস্বাভাবিক মুনাফা, নিরীক্ষায় পতন

২০২৩ নভেম্বর ২০ ০৯:৫০:৩৭
 অনিরীক্ষা হিসাবে অস্বাভাবিক মুনাফা, নিরীক্ষায় পতন

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কর্তৃপক্ষ প্রান্তিক আর্থিক হিসাবগুলোতে বড় মুনাফা দেখায়। কিন্তু পুরো বছরে নিরীক্ষায় কোম্পানিটির লোকসানের তথ্য বেরিয়ে আসে। এই লোকসানের আগে কৃত্রিম মুনাফা দেখিয়ে বে লিজিং কর্তৃপক্ষ শেয়ার দর বাড়িয়ে বিক্রি করেছে। এই অবস্থায় কোম্পানিটির প্রান্তিকগুলোর আর্থিক হিসাবে অস্বাভাবিক উত্থান-পতনের কারন অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বে লিজিংয়ের মতো একই ঘটনা দেখা যাচ্ছে গেম্বলিং আইটেম সোনালি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসে। কোম্পানিটির গত ২ অর্থবছরে (২০২১-২২ ও ২০২২-২৩) অনিরীক্ষিত প্রান্তিক (কোয়ার্টারলি) আর্থিক হিসাবে অস্বাভাবিক মুনাফা করতে দেখা গেছে। কিন্তু দুই অর্থবছরই নিরীক্ষা হিসাবে গিয়ে সে মুনাফা টিকেনি। এক্ষেত্রে কোম্পানিটির দুই অর্থবছরের ক্ষেত্রেই ১ম ৯ মাসের ব্যবসায় যে মুনাফা দেখিয়েছে, পুরো অর্থবছরে গিয়ে তার চেয়ে কম হয়েছে।

সোনালি পেপারের ২০২১-২২ অর্থবছরের ৯ মাসের (জুলাই ২১-মার্চ ২২) অনিরীক্ষিত আর্থিক হিসাবে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) দেখায় ১৪.৭২ টাকা। তবে ২০২১-২২ এর পুরো অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় ইপিএস কমে আসে ৬.০৩ টাকা।

আর সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৯ মাসের অনিরীক্ষিত ইপিএস দেখিয়েছিল ৫.৪০ টাকা। যা ২০২২-২৩ এর পুরো অর্থবছরের নিরীক্ষা হিসাবে কমে এসেছে ৪.৭৪ টাকায়। যে কোম্পানিটির ওই অর্থবছরের ২য় ও ৩য় প্রান্তিকের আর্থিক হিসাব প্রকাশ বন্ধ ছিল। যেগুলো পুরো অর্থবছরের নিরীক্ষা হিসাবের সঙ্গে গত ৩০ অক্টোবর একইদিনে প্রকাশ করা হয়। যদি ওই দুই প্রান্তিকের আর্থিক হিসাব আগেই বা যথাসময়ে প্রকাশ করা হতো, তাহলে কোম্পানিটির ৯ মাসে ইপিএস বেশি হতে পারত। যা নিরীক্ষা হিসাবে গিয়ে সমন্বয় হতো।

একই প্রক্রিয়ায় বে লিজিং কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালের ১ম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ২১) শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) দেখায় ২.৭৫ টাকা। তবে ১২ মাসে বা ২০২১ সালের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এই মুনাফাতো দূরের কথা ৯৯ পয়সা করে লোকসানের তথ্য বেরিয়ে আসে।

আরও পড়ুন......অপরাধ করেও শাহজালাল ইক্যুইটি শাস্তির বাহিরে

এমন আর্থিক হিসাবকে অস্বাভাবিক মনে করে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর বিএসইসি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিকে কোম্পানিটির ৯ মাসের অনিরীক্ষিত ও ১২ মাসের নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাবের মধ্যে কোন জাগলারি হয়েছে কিনা, ইনসাইডার ট্রেডিং আছে কিনা, ওই অস্বাভাবিক আর্থিক হিসাবের কারনে শেয়ার দরে প্রভাব ও মার্কেট ম্যানুপুলেশন হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন জমা দিতে বলে কমিশন।

বে লিজিংয়ের ন্যায় সোনালি পেপার নিয়েও বিএসইসি তদন্ত কমিটি গঠন করবে বলে মনে করছেন সাধারন বিনিয়োগকারীরা। এর মাধ্যমে অধ্যাপক শিবলী কমিশন ব্যক্তিগত সর্ম্পক্যকে দূরে ঠেলে অন্যদের ন্যায় এই কোম্পনির ক্ষেত্রেও সুশাসন বজায় রাখবেন বলে তারা আশাবাদি।

কারন এই জাতীয় কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা/পরিচালকেরাই শেয়ার কারসাজির জন্য কৃত্রিম মুনাফা দেখায় এবং গেম্বলারদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে। তারা সম্মিলিতভাবে অতিরঞ্জিত মুনাফার মাধ্যমে শেয়ার দর বৃদ্ধিতে সাধারন বিনিয়োগকারীদেরকে আকৃষ্ট করে। যখন সাধারন বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে নামে, তখন তারা শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়। পরবর্তীতে লোকসানে পড়ে সাধারন বিনিয়োগকারীরা। যেমনটি বে লিজিংয়ের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।

শেয়ারবাজারে নিরীক্ষত আর্থিক হিসাবের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন রয়েছে। সেখানে অনিরীক্ষিত কোয়ার্টারলি (প্রান্তিক) আর্থিক হিসাব বিশ্বাস করা যে কতটা কঠিন, তা সাধারন বিনিয়োগকারীরা ভালোভাবেই টের পান। এই বাজারে কোম্পানিগুলোর অনিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব ম্যানেজমেন্টের সুবিধামতো তৈরী করা হয়। যে কারনে অনেক কোম্পানির এক প্রান্তিকের সঙ্গে আরেক প্রান্তিকের ব্যবসার কোন মিল থাকে না। ফলে প্রতারণার ফাদেঁ পড়তে হয় সাধারন বিনিয়োগকারীদের।

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে ইনসাইডার ট্রেডিং যে অন্যতম প্রধান সমস্যা, এটা একবাক্যে স্বীকার করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, কোম্পানির উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা সরাসরি শেয়ার ব্যবসায় জড়িয়ে রয়েছে। যে কারনে অনেক কোম্পানির প্রান্তিক আর্থিক হিসাবগুলো তাদের শেয়ার ব্যবসার সুবিধার্থে প্রস্তুত করা হয়। এক্ষেত্রে কোন প্রান্তিকে মুনাফা বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেখানো হয়। যেটা পুরো বছরের হিসাবে কিংবা এক প্রান্তিকের হিসাব আরেক প্রান্তিকের সঙ্গে সমন্বয় করে দেখানো হয়।

সোনালি পেপার কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে মুনাফা তলানিতে নেমে আসার খবরের সঙ্গে সঙ্গে পূর্বের ন্যায় এবারও ১ম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক হিসাবে অস্বাভাবিক মুনাফা দেখিয়েছে।

এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইপিএস ৪.৭৪ টাকা হলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১ম প্রান্তিকে দেখিয়েছে ৫.৫৭ টাকা। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ইপিএস ৬.০৩ টাকা হলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১ম প্রান্তিকে দেখিয়েছিল ৭.০২ টাকা।

এর মাধ্যমে সোনালি পেপার কর্তৃপক্ষ কারসাজি করে আকাশচুম্বি শেয়ার দরকে ধরে রাখার বা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করেন বলে মনে করছেন সাধারন বিনিয়োগকারীরা। এই কোম্পানিটির শনিবার (১৮ নভেম্বর) শেয়ার দর রয়েছে ৬১৫.১০ টাকায়। যা ফ্লোর প্রাইস।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে