ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ভূয়া প্লেসমেন্টের অ্যাগ্রো অর্গানিকার কিআইও আবেদন চলছে

২০২৩ নভেম্বর ২৮ ১০:১১:৪১
ভূয়া প্লেসমেন্টের অ্যাগ্রো অর্গানিকার কিআইও আবেদন চলছে

দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন শেয়ারবাজারে যেকোন মন্দা কাজের বিপরীতে কঠোর অবস্থান নেয়। বিশেষ করে শেয়ারবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করতে চাওয়া কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে তার কমিশনের কার্যকরি ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। যা শেয়ারবাজারে আশার আলো ছড়িয়েছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে ও কয়েক মাস পরে মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া শিবলী কমিশনের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যে কারনে কোটি কোটি টাকার ভূয়া প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়েও টাকা তোলার সুযোগ পাওয়ার ঘটনা ঘটছে।

শেয়ারবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের আবেদনের আগে হুট করে অ্যাগ্রো অর্গানিকা ২৭ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি থেকে ৩৮ কোটি টাকা হয়ে যায়।এই অস্বাভাবিক মূলধন বৃদ্ধি করা হয়েছে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে। এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের নামে কোটি কোটি টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু দেখানো হয়েছে, যেগুলোর অস্তিত্বই নেই। যাতে ওইসব অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্যু করা শেয়ারের বিপরীতে কোম্পানিতে টাকা আসা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। কারন অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্বভাবিকভাবেই কোটি কোটি টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ার কেনার সক্ষমতা থাকে না।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম অর্থ বাণিজ্যকে বলেছিলেন, কমিশন অভিযোগ খতিয়ে দেখে যদি প্লেসমেন্টহোল্ডারদের অস্বিত্ব না পায় এবং ভূয়া হিসেবে প্রমাণিত হয়, তাহলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে কোম্পানি যদি ভবিষ্যতে তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়, তাহলে ওইসব প্লেসমেন্ট শেয়ার ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে স্থানান্তর করা হবে।

কিন্তু বাস্তবে তা আর হয়নি। সম্প্রতি একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির সচিব আলাপকালে বলেন, অ্যাগ্রো অর্গানিকার পরিচালক জনাব শাহিন বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত ও কমিশনার শেখ সামসুদ্দিন আহমেদের ছাত্র। এই কোম্পানি কিছু ভুল করেছে। তবে টাকা ঠিকই তুলে নিয়ে যাবে। যার সত্যতা মিলেছে। এ কোম্পানিটিকে গত ২৭ নভেম্বর কিআইওতে আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

অ্যাগ্রো অর্গানিকায় আরও ভয়াবহ রকমের দূর্ণীতি ছিল। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোম্পানিটির কিআইও অনুমোদন দেয়। অথচ একই অপরাধের দায়ে বিএসইসি বানকো ফাইন্যান্সের এমডিসহ তার পরিবারের লোকজনকে রেকর্ড জরিমানা করেছে।

২০১৫ সালের পাবলিক ইস্যু রুলসের ৩(২)(ডি)-তে বলা হয়, ইস্যু ম্যানেজার ইস্যুয়ারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারবে না এবং শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। একই কথা বলা আছে কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর রুলসের ৮ এর ৩-এতেও। কিন্তু পাবলিক ইস্যু রুলস ওই ধারা ভঙ্গের দায়েবানকো ফাইন্যান্সের এমডিও তার পরিবারকে করা হয়েছে রেকর্ড জরিমানা। আর ইউনুসের অ্যাগ্রো অর্গানিকাকে করা হয়েছে পুরুস্কৃত।

২০১৫ সালের পাবলিক ইস্যু রুলসের অধীনে বিবিএস কেবলস ও নাহি অ্যালুমিনিয়াম শেয়ারবাজারে আসে। যার ইস্যু ম্যানেজার ছিল বানকো ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট। প্রতিষ্ঠানটির এমডির আত্মীয় স্বজন আইপিওকালীন বিবিএস কেবলস ও নাহি অ্যালুমিনিয়ামের শেয়ার ধারন করায়, ২০১৫ সালের পাবলিক ইস্যু রুলসের ৩(২)(ডি) ধারা ভঙ্গ হয়েছে বলে বিএসইসি সাব্যস্ত করে এবং তাকে ও তার পরিবারকে কোটি কোটি টাকা জরিমানা ও চাকরীচ্যুত করে।

কিন্তু মোহাম্মদ ইউনুসের শাহজালাল ইক্যুইটি অ্যাগ্রো অর্গানিকার ইস্যু ব্যবস্থাপনার কাজ করছে এবং ইউনুসের মালিকানাধীন ইউনুস পেপার মিলস অর্গানিকার ৩ লাখ ৬০ হাজার শেয়ার ধারন করা সত্ত্বেও অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন পায়। জরিমানা তো পরের কথা। মোহাম্মদ ইউনুস শাহজালাল ইক্যুইটির প্রধান উপদেষ্টা, তার স্ত্রী চেয়ারম্যান এবং তিনি ইউনুস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। যে গ্রুপের কোম্পানি ইউনুস পেপার মিলস।

এমন অনিয়ম থাকা সত্ত্বেও কমিশন সভায় অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন পায় অ্যাগ্রো অর্গানিকা। যে কোম্পানি ওই অনুমোদনের পরে ইউনুসের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ধারন বা মালিকানায় পরিবর্তন করে।

অ্যাগ্রো অর্গানিকায় প্রসপেক্টাসে ৪৫ পৃষ্টায় ১০৮ নম্বর সিরিয়ালের শেয়ারহোল্ডার বা মালিকানায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। কোম্পানিটির কিউআইও অনুমোদন দেওযার পরে সম্প্রতি ৩ লাখ ৬০ হাজার শেয়ারধারী ইউনুস পেপার মিলসের পরিবর্তন এসেছে। তার জায়গায় নতুন শেয়ারহোল্ডার হিসেবে বেঙ্গল অ্যাসেট হোল্ডিংসকে দেখানো হচ্ছে।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে