ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিবলী কমিশনের সাড়ে ৩ বছরে শেয়ারবাজার ছেড়েছে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী

২০২৩ নভেম্বর ২৯ ০৯:২৭:০০
শিবলী কমিশনের সাড়ে ৩ বছরে শেয়ারবাজার ছেড়েছে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী

করোনা মহাকালিন এক সংকটময় মুহূর্তে শেয়ারবাজারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন। যিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরে শেয়ারবাজারে আশার আলো দেখা দেয়। খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়ায় শেয়ারবাজার। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে শেয়ারবাজার আবারও সেই জায়াগাতেই ফিরে গেছে। আশা ছেড়ে দিয়েছে বিনিয়োগকারীরা। তাই এই কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও আবারও নতুন কারও দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে শেয়ারবাজার ঘুরে দাড়াঁবে বলে আশা করছেন তারা।

করোনাকালীন সময় ২০২০ সালের মে মাসে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। যিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরে গভীর সংকটে থাকা শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ায়। অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ। যাতে করে মূল্যসূচক ও লেনদেনে ব্যাপক উন্নতি হয়। কিন্তু উন্নতিতে বড় ভূমিকা রাখে গেম্বলাররা। যাদেরকে কমিশন প্রশ্রয় দেয়। ফলে একসময় বিনিয়োগকারীদেরকে ক্ষতিগ্রস্থ হতে বাধ্য হয়। যাতে বাজারের প্রতি আস্থা হারিয়ে যায় বিনিয়োগকারীদের।

এরই ধারাবাহিকতায় শেয়ারবাজার ছাড়তে শুরু করে বিনিয়োগকারীরা। অথচ শিবলী কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে শেয়ারবাজারকে ব্র্যান্ডিং করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচারণা চালিয়েছে। কিন্তু এ থেকে কোন বিনিয়োগ আসেনি। বরং বিদেশীদের লেনদেন এখন তলানিতে।

শিবলী কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার সময় ২০২০ সালের ৩১ মে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বা বেনিফিসিয়ারি হিসাব (বিও) ছিল ২৫ লাখ ৭৮ হাজার। যা গত ৩১ অক্টোবর কমে এসেছে ১৭ লাখ ৬১ হাজারে। অর্থাৎ শিবলী কমিশনের গত সাড়ে ৩ বছরে শেয়ারবাজার ছেড়েছে ৮ লাখ ১৭ হাজার বা ৩২ শতাংশ বিনিয়োগকারী।

অথচ শিবলী কমিশনের দায়িত্ব গ্রহনের পরে বিনিয়োগকারীদের অনেক আস্থা তৈরী হয়েছিল। তবে সেটা কমে যাওয়ার পেছনে কমিশনের অনেক ভূমিকা রেখেছে। এরমধ্যে সর্বশেষ ফ্লোর প্রাইস আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। এর মাধ্যমে শেয়ারবাজারকে কৃত্রিমভাবে ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। যা পৃথিবীর অন্যসব দেশে বিরল ঘটনা। এছাড়া গেম্বলারদেরকে প্রশ্রয় দেওয়া, আইপিওতে আসা কোম্পানির নিম্নমান, কারসাজিকরদের শাস্তিতে বৈষম্য ইত্যাদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

যাতে এই কমিশন অনেক ভালো কাজ করার পরেও তাদের ওইসব নেতিবাচক কাজই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিনিয়োগকারীরা কমিশনের দু-চারটা নেতিবাচক কাজকেই এগিয়ে রেখেছে। হারিয়ে ফেলেছে আস্থা। ছেড়েছে শেয়ারবাজার। তাই আবারও নতুন কারও দায়িত্বে এই শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে সেই প্রত্যাশায় বিনিয়োগকারীরা।

দেশীয় বিনিয়োগকারীদের ন্যায় বিদেশীদেরও বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের প্রতি অনাস্থা তৈরী হয়েছে। যদিও কমিশন বিদেশীদেরকে আনতে অনেক দেশে রোড শো করেছে। তারপরেও বিদেশীদের লেনদেন এখন তলানিতে।

দেখা গেছে, শিবলী কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের বছরে (২০২০) ১১ মাসে (এপ্রিল মাস বন্ধ ছিল) বিদেশীরা ১০ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকার লেনদেন করে। যেটার পরিমাণ ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে বা ১০ মাসে নেমে এসেছে ১ হাজার ৭৫৩ কোটিতে। অথচ বিদেশীদেরকে আনতে আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, জার্মান, ফ্রান্স, দুবাই, জাপান, সুইজারল্যান্ড, কাতারের মতো দেশে রোড শো করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন ১৯৯৩ এর ধারা ৫ ও ৬ এর বিধানাবলী প্রতিপালন করতে ২০২০ সালের ১৭ মে শিবলী রুবাইয়াতকে ৪ বছর মেয়াদের জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তার পরেই একই মেয়াদের জন্য কমিশনার হিসেবে সাবেক শিল্প সচিব আব্দুল হালিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মিজানুর রহমানকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। যাদের মেয়াদ আগামি মে মাসে শেষ হতে যাচ্ছে।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে