ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১

বিক্রিতে ধস ও হাজার কোটির ঋণের চাঁপে বড় লোকসানে রানার

২০২৩ ডিসেম্বর ২৬ ০৯:৩৫:০৫
বিক্রিতে ধস ও হাজার কোটির ঋণের চাঁপে বড় লোকসানে রানার

ট্রাক, পিকআপ, মোটরসাইকেল বাজারজাতকারী রানার অটোমোবাইলসের সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরের ব্যবসায় পণ্য বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। করোনা পরবর্তী ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় এই পতন হয়েছে। যে কোম্পানিটি হাজার কোটি টাকার উপরে ঋণে জর্জরিত। ফলে গুণতে হচ্ছে অনেক সুদজনিত ব্যয়। এই বিক্রিতে ধস ও উচ্চ সুদজনিত ব্যয় কোম্পানিটিকে বড় লোকসানে নিয়ে গেছে।

কোম্পানিটির ২০২২-২৩ অর্থবছরের সমন্বিত (সাবসিডিয়ারিসহ) নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

অথচ মুনাফা বাড়ানোর লক্ষ্যে শেয়ারবাজারে আসে রানার অটোমোবাইলস। কোম্পানিটি আইপিও ফান্ডের ১০০ কোটি টাকার মধ্যে ৩৩ কোটি দিয়ে ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি ৬৩ কোটি টাকা দিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারনে ব্যবহারের কথা ছিল। এরমধ্যে চেসিস ওয়েল্ডিং লাইনের জন্য ১২ কোটি ১৮ লাখ টাকা, বডি ওয়েল্ডিং লাইনের জন্য ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা, প্রিন্ট বুথের জন্য ২৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা এবং ভেহিক্যাল অ্যাসেম্বিলিং ও টেস্টের জন্য ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যবহারের কথা জানিয়েছিল।

বুক বিল্ডিংয়ে ৭৫ টাকা কাট-অফ প্রাইস নির্ধারন হওয়া রানার অটোমোবাইলসের শেয়ার দর সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) দাঁড়িয়েছে ৪৮.৪০ টাকায়।

দেখা গেছে, রানার অটোমোবাইলসের ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৬২ কোটি ৯৬ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। যার পরিমাণ আগের অর্থবছরে হয়েছিল ১ হাজার ১১১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে বিক্রি কমেছে ৪৪৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকার বা ৪০ শতাংশ।

কোম্পানিটির ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রির জন্য উৎপাদন ব্যয় হয়েছিল ৭৪৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। যা ছিল বিক্রির ৬৭ শতাংশ। যাতে গ্রোস প্রফিট (মোট মুনাফা) হয়েছিল ৩৬৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। আর গত অর্থবছরের বিক্রির বিপরীতে ৬৮ শতাংশ হারে উৎপাদন ব্যয় হয়েছে ৪৫১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। যাতে গ্রোস প্রফিট হয়েছে ২১১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এ হিসাবে গ্রোস প্রফিট কমেছে ১৫৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা বা ৪২ শতাংশ

২০২২-২৩ অর্থবছরে এই বড় গ্রোস প্রফিটের পরেও কোম্পানিটিকে নিট লোকসান গুণতে হয়েছে। যার প্রধান কারন হিসাবে রয়েছে ব্যাংকের সুদজনিত ব্যয়। কোম্পানিটির মুনাফার বড় অংশই চলে যাচ্ছে ব্যাংকের পকেটে।

রানার অটোমোবাইলসের ২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৪৮ কোটি ২১ লাখ টাকা। কিন্তু হাজার কোটি টাকার ঋণে জর্জরিত কোম্পানিটিকে সুদের জন্য দিতে হয়েছে ১৪১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। যাতে করপূর্ব লোকসান হয় ৭৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।

এ কোম্পানিটির গত ৩০ জুন বিভিন্ন ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানির কাছে দায়ের পরিমাণ রয়েছে ১ হাজার ৩০১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এরমধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ৫৯১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার ঋণ ও ৫ কোটি ৪১ লাখ টাকার লীজজনিত দায় রয়েছে। এছাড়া ৩২৮ কোটি ২৬ লাখ টাকার স্বল্প মেয়াদি ঋণ ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের কারেন্ট পোরশন হিসাবে ৩৭৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এবং লীজের কারেন্ট পোরশন হিসাবে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার দায় রয়েছে।

কোম্পানিটির ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিক্রি থেকে উৎপাদন ব্যয়, পরিচালন ব্যয়, সুদজনিত ব্যয় ও কর সঞ্চিতি বিয়োগ এবং অন্যান্য আয় যোগ শেষে নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি (৭.৭৫) টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা হয়েছিল ২৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ২.৪০ টাকা।

ব্যবসায় ধসের কারন হিসেবে রানার অটোমোবাইলস কর্তৃপক্ষ ডিএসইকে জানিয়েছে, বিক্রি কমার কারনে মুনাফা ঋণাত্মক হয়েছে। এক্ষেত্রে কোম্পানিটির টু হুইলার, থ্রী হুইলার ও বাণিজ্যিক যানবাহন বিক্রি কমেছে।

উল্লেখ্য, ১১৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের রানার অটোমোবাইলে ২১৬ কোটি ১৪ লাখ টাকার রিটেইন আর্নিংস রয়েছে। যাতে কোম্পানিটির ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ (এনএভিপিএস) রয়েছে ৬২.৬২ টাকায়।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে