ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১

রাইট শেয়ার ইস্যু করতে পাল্টে গেল অ্যাকাউন্টস

২০২৪ জানুয়ারি ১৭ ০৯:১৯:৩৮
রাইট শেয়ার ইস্যু করতে পাল্টে গেল অ্যাকাউন্টস

ইব্রাহিম হোসাইন (রেজোয়ান) : সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজের দুটি উদ্দেশ্য পূরণে ২০২২-২৩ হিসাব বছরের ১ম প্রান্তিকের আর্থিক হিসাব (অ্যাকাউন্টস) দুই রকম তৈরী করেছে। রাইট শেয়ারের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ ও তৃতীয় প্রান্তিকের ফলাফল জানাতে এই দুই ধরনের হিসাব তৈরী করেছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে দুই হিসাবের মধ্যে পার্থক্য হয়েছে। যা অস্বাভাবিক ছাড়া সম্ভব না বলে মনে করেন পেশাদার হিসাববিদরা।

নিয়ম অনুযায়ি, তালিকাভুক্ত কোম্পানির কোন প্রান্তিকের সময় শেষ হওয়ার ১ মাসের মধ্যে ওই সময়ের ব্যবসায়িক অবস্থা প্রকাশ করতে হয়। তবে সেটা অডিট বাধ্যতামূলক না হওয়ায় সাধারনত আনঅডিট প্রকাশ করে থাকে কোম্পানিগুলো। সেই ধারাবাহিকতায় সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ ২০২২-২৩ হিসাব বছরের ১ম প্রান্তিক শেষে আনঅডিটেড হিসাব প্রকাশ করে। পরে আবার একই সময়ের হিসাব নিয়ে রাইট শেয়ারের আবেদন করেন। এ সময় কোম্পানিটিকে অডিট শেষে হিসাব জমা দিতে হয়। আর তখনই বেরিয়ে আসে কোম্পানির ভিন্ন চিত্র। এই দুই হিসাবের ফাইন্যান্সিয়াল পজিশন, ইনকাম স্টেটমেন্ট ও ক্যাশ ফ্লোর আইটেমগুলোর মধ্যে পার্থক্য আছে।

হিসাববিদদের মতে, অ্যাকাউন্টস তৈরী করা কোম্পানির কাজ। আর অডিটরের কাজ তার সত্যতা যাছাই করা। যদি ভুল কিছু থাকে তা নিয়ে অডিটর অপিনিয়ন দেয়। যাতে অডিট ও আনঅডিট হিসাবে পার্থক্য হওয়ার কথা না।

দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১ম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২২) অনিরীক্ষিত হিসাবে প্রশাসনিক ও বিক্রিবাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৪৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা। কিন্তু নিরীক্ষিত হিসাবে এই ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এছাড়া অনিরীক্ষিত হিসাবে ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ডবাবদ (ডব্লিউপিপিএফ) ৯ লাখ টাকা দেখানো হলেও নিরীক্ষিত হিসাবে ৮ লাখ ৯১ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে।

রাইট অফার ডকুমেন্টসে পাল্টে হয়ে যায়...

গরমিল হিসাবের মাধ্যমে অনিরীক্ষিত হিসাবে নিট মুনাফা ৬৬ লাখ ৩ হাজার টাকা বা শেয়ারপ্রতি ০.৩৩ টাকা মুনাফা দেখানো হয়েছিল। তবে নিরীক্ষিত হিসাবে নিট মুনাফা কমে এসেছে ৬৪ লাখ ১৩ হাজার টাকায় বা শেয়ারপ্রতি ০.৩২ টাকায়।

তবে রাইট অফার ডকুমেন্টস ও স্বাভাবিক হিসাব উভয় ক্ষেত্রে আগের বছরের ১ম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২১) আয়-ব্যয়ের হিসাবে কোন পার্থক্য নেই। কারন রাইট অফার ডকুমেন্টসে তুলনার জন্য প্রদত্ত ওই হিসাব নিরীক্ষা করা হয় নাই। তাই কোম্পানির উভয় ক্ষেত্রেই হিসাব অপরিবর্তিত রয়েছে।

এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক হিসাব প্রকাশ করা হয়েছিল খামখেয়ালিপনাভাবে। যেখানে সঠিকভাবে পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু যখন বাজার থেকে টাকা তোলার প্রয়োজন পড়েছে, তখন রাইট অফার ডকুমেন্টসে ঠিকই ভালো করে প্রকাশ করেছে।

কোম্পানিটির ব্যলেন্স শীটেও আছে পার্থক্য। কোম্পানিটির অনিরীক্ষিত হিসাবে রিটেইন আর্নিংস ২১ কোটি ৮২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা দেখানো হলেও রাইট অফার ডকুমেন্টসে ২১ কোটি ৮১ লাখ ৭ হাজার টাকা উল্লেখ। এছাড়া অনিরীক্ষিত হিসাবে ক্রেডিটরস ও ব্যয়জনিত দায় হিসাবে ৭৫ কোটি ৫১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা দেখানো হলেও রাইট অফার ডকুমেন্টসে ৭৫ কোটি ৫৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা, অনিরীক্ষিতের ৩৫ লাখ ১০ হাজার টাকার ডব্লিউপিপিএফ সঞ্চিতি রাইট অফার ডকুমেন্টসে ৩৫ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে।

রাইট অফার ডকুমেন্টসে পাল্টে হয়ে যায়...

হিসাববিদ মোহাম্মদ সামসুর রহমান (এফসিএমএ) বলেন, অডিট ও আনঅডিট হিসাবের মধ্যে পার্থক্য তৈরী হওয়ার কোন যৌক্তিক কারন থাকতে পারে না। এমন নয় যে অডিট করা হলে অডিটর ভূল অ্যাকাউন্টস সঠিক করে দেয়। অডিটরসের দায়িত্ব কোম্পানির তৈরী অ্যাকাউন্টসের সত্যতা যাছাই করা। যদি অ্যাকাউন্টস ভূল হয় তাহলে মন্তব্য করা। এ ছাড়া এমন নয় যে আন অডিট অ্যাকাউন্টস মানেই ভুল হিসাব।

প্রিমিয়াম নেবে এমন একটি কোম্পানির পরিচালন নগদ প্রবাহ ঋণাত্মক। ২০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ সিনোবাংলা ওই সময় নিট পরিচালন নগদ প্রবাহ হয়েছে ঋণাত্মক ৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ২.২৪ টাকা। যার পরিমাণ এর আগের বছরে ছিল ঋণাত্মক ২.৯১ টাকা।

এ কোম্পানিটির ব্যবসা আহামরি কিছু না। এর চেয়ে ভালো মুনাফার হার নিয়েও শুধুমাত্র অভিহিত মূল্যে শেয়ার ইস্যু করতে অনেক কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসছে। সিনোবাংলার শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ২ টাকার মধ্যে এবং লভ্যাংশ ১০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। যেখানে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার শর্তে প্রতিবছর অনেক কোম্পানি তালিকাভুক্ত হচ্ছে। কিন্তু সিনোবাংলাকে ১০ টাকা প্রিমিয়ামসহ প্রতিটি শেয়ার ২০ টাকা করে ইস্যুর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এসবের মধ্য দিয়ে আগামি ২৮ জানুয়ারি রাইট শেয়ার ইস্যুর চাঁদা সংগ্রহ শুরু করতে যাচ্ছে সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ। যা চলবে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

এ বিষয়ে জানতে সিনোবাংলার সচিব হাবিবুর রহমানকে ফোন দিলে তিনি এর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নন বলে জানান। এ জন্য শাহজালাল নামের এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে তার ফোন নাম্বার দেন। এরপরে গত ১৫ জানুয়ারি শাহজালালকে ফোন দিলে তিনি বলেন, অ্যাকাউন্টসের বিষয় যেহেতু, তাই দেখে মন্তব্য করতে হবে। পরের দিন আবারও তাকে ফোন দিলে বলেন, অ্যাকাউন্টসের বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না। এজন্য প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) দায়িত্বপ্রাপ্ত। তাকে অফিসের টিঅ্যান্ডটি নাম্বারে ফোন দিতে বলেন। পরে অফিসের নাম্বারে ফোন দিলে রিসিভশন থেকে জানায়, উনি ব্যস্ত, কথা বলতে পারবেন না।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে