ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২

শিগগিরই চীনে হবে ইনভেস্টমেন্ট সামিট: বিসিসিসিআই

২০২৪ জানুয়ারি ২৫ ১৯:০১:২২
শিগগিরই চীনে হবে ইনভেস্টমেন্ট সামিট: বিসিসিসিআই

চীনা বিনিয়োগকারীরা এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এ জন্য বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। এরই ধরাবাহিকতায় বাংলাদেশে সম্ভব্য বিনিয়োগের সেক্টরগুলো নিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে আলোচনা করেছে বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিসিআই)। আলোচনায় দেশের পুঁজিবাজারে চীনের বড় বিনিয়োগ আনতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিডার সঙ্গে আলোচনা করে শিগগিরই চীনে একটি ইনভেস্টমেন্ট সামিট আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিসিসিসিআই’র সাধারণ সম্পাদক ও মৃধা বিজনেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল মামুন মৃধা।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কার্যালয়ে পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) নবনির্বচিত কমিটি সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষত ও মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় সিএমজেএফের সভাপতি এস এম গোলাম সামদানী ভূঁইয়া, সাবেক সভাপতি জিয়াউর রহমান, সহ-সভাপতি বাবুল বর্মণ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন রেজওয়ান, কার্যনির্বাহী সদস্য হামিদ সরকার, এস এম নুরুজ্জামান তানিম, জুনায়েদ শিশির ও তৌহিদুল ইসলাম রানা উপস্থিত ছিলেন।

আল মামুন মৃধা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজার অনেক বেশি শক্তিশালী। সে তুলনায় আমাদের দেশের পুঁজিবাজার এখন পর্যন্ত সে পর্যায়ে পৌঁছাতে পানেনি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের পুঁজিবাজারের সঙ্গে তাদের সাধারণ মানুষ অনেক বেশি সম্পৃক্ত। যেটা আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে অনেক কম। দুইবার বড় ধসের কারণে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের আগ্রহ কমে গেছে। এরপরেও পুঁজিবাজার গতিশীল হয়ে উঠছিল। কিন্তু সম্প্রতিক সময়ে করোনা মহামারি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুক্তসহ নানান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আমাদের পুঁজিবাজারে নেতিবচক প্রভাব পড়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারদরের সর্বনিম্ন সীমা) বহাল রাখার কারণে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ অনেকটা কমেছে। তবে আমরা আশা করছি, নির্বাচন পরবর্তী পুঁজিবাজার আরো গতিশীল হবে।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে বিভিন্ন সেক্টরের কোম্পানি রয়েছে। ওই কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চায়নার ব্যবসা রয়েছে। তাই যেসব কোম্পানির সঙ্গে চায়নার ব্যবসা রয়েছে তাদেরকে আমরা একটি ছাতার নিচে আনতে চাই। এতে চায়নার সঙ্গে কোম্পানিগুলোর সেক্টরভিত্তিক আলোচনা করতে সহজ হবে। এ কাজে সহযোগিতা করতে সিএমজেএফ বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় আমারা জোরালো ভূমিকা রেখে আসছি। তাই আমরা দেশের প্রয়োজনে যে কোনো উদ্যোগের সঙ্গে আমরা কাজ করব। সিএমজেএফের সঙ্গে বাংলাদেশ চায়না চেম্বার কাজ করতে আগ্রহী।

মৃধা বিজনেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, চায়নার সঙ্গে সম্পৃক্ত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। তাই আমরা দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ আরো বাড়াতে চাই। আমরা চাই বেশি বেশি কোম্পানি এখানে থাকুক। আগামীতে যেসব কোম্পানির সঙ্গে চিনের ব্যবসা বেশি তাদেরকে বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজর বোর্ডে অ্যাসোসিয়েট মেম্বার হিসেবে রাখার চেষ্টা করব। সেখানে তাদের ভোট প্রদান করার ক্ষমতা না থাকলেও তাদের সুবিধা-অসুবিধা তুলতে ধরতে পারবে। আমরা তাদের দাবিগুলো চিনের কাছে তুলে ধরতে সহায়তা করব। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্যে নানান প্রতিবন্ধকতার দেখা দিতে পারে। তা সমাধানে বিসিসিসিআই ইন্টারমিডিয়ারিজ ফোর্স হিসেবে কাজ করতে পারে।

বিসিসিসিআই’র সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের দেশে বিনিয়োগ না আসার মূল কারণ সমন্বয়হীনতা। এটা যতদিন কাটিয়ে উঠা সম্ভব না হবে, ততদিন কোনো সেক্টরেই বিনিয়োগ আসবে না। বাংলাদেশে সাড়ে পাঁচশোর বেশি চাইনিজ কোম্পনি কাজ করছে। তারা বিভিন্ন ডাইভার্সিফাই সেক্টরে কাজ করছে। বাংলাদেশে চাইনিজদের যত রকমের ইনভল্বমেন্ট দেখছেন তাদের অধিকাংশই বিসিসিসিআই এর সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ। এই সুযোগটা যদি বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা কাজে লাগাতে না পারেন তাহলে এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক ব্যপার। বাংলাদেশ যে বিনিয়োগের জন্য একটা উর্বর ক্ষেত্র, সেটা প্রোমট করার জন্য কোনো সেক্টর থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ কথাটাই আমরা প্রোমট করা চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ এখনো সেই পর্যায়ে যায়নি, যে বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগকরার জন্য ছুটে আসবে। বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দি দেশগুলো বিনিয়োগ আকৃষ্টের জন্য প্রতিনিয়তই বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ও চায়নার মধ্যে গ্রোইং ট্রেড রিলেশনশিপ রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সম্পর্ক দিনে দিনে আরও শক্তিশালী হচ্ছে। আমরা আশা করছি, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বাড়বে। চাইনিজ কাস্টমসের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর ২৮ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে এক্সপোর্ট হয়েছে। এ বছর সেটা আশা করছি ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এদিকে চায়না বাংলাদেশ থেকে কিছু প্রোডাক্ট আমদানি করবে। এ বিষয়ে তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। নির্বাচনের কারণে এ বিষয়টা থেমে ছিল। এখন সেটা দ্রুত কার্যকর হবে।

মতবিনিময়কালে সিএমজেএফের সভাপতি এস এম গোলাম সামদানী ভূঁইয়া বলেন, কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনের সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চুক্তি রয়েছে। ওই চুক্তির মাধ্যমে ডিএসইর ২৫ শতাংশ মালিকানা চীনা কনসোর্টিয়ামের হাতে। সে কারণে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টদের আশা ছিল চীনা কনসোর্টিয়ামের সম্পৃক্ততায় ডিএসই কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এগিয়ে যাবে এবং বদেশি বিনিয়েগ আসবে। কিন্তু তা দেখা যায়নি। তাই পুঁজিবাজারসহ দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে সিএমজেএফ ও বাংলাদেশ চায়না চেম্বার একসঙ্গে কাজ করবে। এ কাজে সিএমজেএফের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

সিএমজেএফের সাবেক সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, চায়নার সঙ্গে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের একটা যোগসূত্র রয়েছে। কারণ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী চিনের দুইটি স্টক এক্সচেঞ্জ। সে জন্য চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের স্টক মার্কেট সরাসরি সম্পৃক্ত। তাই চিনের সঙ্গে আমাদের দেশের সম্পৃক্ততা বাড়াতে বিসিসিসিআই ও সিএমজেএফ একসঙ্গে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারীর হাত ধরে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। কিন্তু আমরা যেমনটি প্রত্যাশা করেছিলাম সেটার প্রতিফলন ঘটেনি। বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারীর একরকম অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। কি কারণে এটা হয়েছে তা দেখার সময় হয়েছে। বাংলাদেশে চায়নার বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে বিসিসিসিআই ও সিএমজেএফ একসঙ্গে কাজ করতে পারে।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে