ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পূর্ব ১৩৮ কোটি টাকার আয় এখন ৫৩ কোটি

২০২৪ জানুয়ারি ২৮ ০৯:৫০:১০
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পূর্ব ১৩৮ কোটি টাকার আয় এখন ৫৩ কোটি

দেশের চিংড়ি ও মাছ রপ্তানি খাতের ব্যবসা ধারাবাহিকভাবে পতনে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে এ খাতের কোম্পানির সংখ্যা ১০৫টি থেকে কমে ৪৩-এ নেমে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করার আগেভূয়া সম্পত্তি দেখানো আছিয়া সী ফুডসের ২১৩ শতাংশের মতো অস্বাভাবিক রপ্তানি বাড়ে। যাতে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বাড়ে ১৮৪%। করোনা মহামারির কারনে পুরো দুনিয়ার স্থবিরতার সময় এমন উন্নতি করা কোম্পানিটির মুনাফা তালিকাভুক্তির অর্থবছরেই (২০২১-২২) অর্ধেকে নেমে আসে।

আছিয়া সী ফুডসের ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৪ কোটি ২ লাখ টাকার মাছ রপ্তানি হয়। যেখান থেকে নিট মুনাফা হয়েছিল ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। তবে শেয়ারবাজারে থেকে অর্থ উত্তোলনের আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি ২১৩ শতাংশ বেড়ে হয়ে যায় ১৩৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এ থেকে নিট মুনাফা হয় ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ হিসেবে মুনাফা বৃদ্ধি পায় ২ কোটি ৭২ লাখ টাকা বা ১৮৪ শতাংশ।

অর্থ উত্তোলন শেষে এই রপ্তানি ও মুনাফা আবার জায়গায় ফিরে এসেছে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আছিয়ার কিউআইও পূর্ব ১৩৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকার মাছ রপ্তানি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫২ কোটি ৮০ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। যার পরিমাণ তালিকাভুক্তির অর্থবছরে (২০২১-২২) হয়েছিল ৩৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

এদিকে কোম্পানিটির ২০২২-২৩ অর্থবছরে নিট মুনাফা হয়েছে ৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। যাতে কিউআইও পূর্বের তুলনায় নিট মুনাফা কমেছে ৪৪ লাখ টাকা বা ১০ শতাংশ।

অথচ ব্যবসা ও মুনাফা বাড়ানো লক্ষ্যে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে আছিয়া সী ফুডস। এ কোম্পানিটি কিউআইও’র মাধ্যমে প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যে ১ কোটি ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ১৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে। যা দিয়ে যন্ত্রপাতি স্থাপন, ঋণ পরিশোধ এবং ইস্যু ব্যবস্থাপনার খরচ খাতে ব্যয় করবে বলে জানিয়েছিল।

শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের আগে ব্যবসায় আকাশচুম্বি উত্থান হওয়া আছিয়া সী ফুডস প্রথম বছরেই সবাইকে লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়। এছাড়া যে একটি অংশ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে, তার পুরোটা মুনাফা থেকে দেওয়া সম্ভব হয়নি। রিজার্ভে হাত দিতে হয়।

আরও পড়ুন......

শেয়ারবাজারে এসেও অনিয়ম থেকে বেরোতে পারেনি আছিয়া ফুডস

আছিয়া সী ফুডসের ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ কোটি ২৪ লাখ টাকার নিট মুনাফার বিপরীতে কোম্পানিটির পর্ষদ শুধুমাত্র সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের জন্য (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) ১০% নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। যাতে করে শুধুমাত্র সাধারন শেয়ারহোল্ডারদেরকেই দিতে হয় ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১ম বছরেই এবং শুধুমাত্র সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে গিয়েই ৩৫ লাখ টাকার রিজার্ভ ব্যবহার করতে হয়।

এদিকে ২য় বছরে এসে কোম্পানিটির লভ্যাংশে বড় পতন হয়েছে। আগের বছরে ১০ শতাংশ দেওয়া আছিয়ার পর্ষদ ২০২২-২৩ অর্থবছরের ব্যবসায়ও শুধুমাত্র সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তবে সেটার পরিমাণ অর্ধেকে বা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

এ বিষয়ে আছিয়া সী ফুডসের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) স্বপনকে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। যিনি আগের অর্থবছরে রপ্তানি কমে যাওয়ার কারনে মুনাফা কমে গেছে বলে জানিয়েছিলেণ। এই রপ্তানি কমে যাওয়ার পেছনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউরোপে তৈরী অস্থিরতা প্র্রধান কারন বলে উল্লেখ করেছিলেন।

ইস্যু ম্যানেজার এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে আসা আছিয়া সী ফুডসের শেয়ারবাজারে আসার আগে মুনাফার ন্যায় সম্পদেও ছিল অস্বাভাবিকতা। তারা আছিয়া সী ফুডসের ২০-২৫ বছর আগে নির্মাণ করা ভবনের (জমি ছাড়া) প্রতি স্কয়ার ফিট খরচ ৪ হাজার ৪৭২ টাকা করে উল্লেখ করে। যা বর্তমান বাজারের উচ্চ দরের কাঁচামাল দিয়ে নির্মাণেও লাগে না।

শেয়ারবাজার থেকে ১৫ কোটি টাকা উত্তোলন করা আছিয়া সী ফুডসের বর্তমানে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৫৩.৪০ শতাংশ।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে