ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১

মেঘনা কনডেন্সড মিল্কে কোটি কোটি টাকার অনিয়ম

২০২৪ ফেব্রুয়ারি ২৫ ০৯:০২:৩০
মেঘনা কনডেন্সড মিল্কে কোটি কোটি টাকার অনিয়ম

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একই উদ্যোক্তা/পরিচালকদের কোম্পানি মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ও মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ। দুটি কোম্পানিরই লোকসান অব্যাহত রয়েছে। তাই বলে থেমে নেই অনিয়ম। কোম্পানি দুটিকে মুনাফায় ফেরানোর চেষ্টার পরিবর্তে সমানতালে চলছে অনিয়ম। এরমধ্যে মেঘনা কনডেন্সড মিল্কে কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন অনিয়ম বেরিয়ে এসেছে।

কোম্পানির ২০২২-২৩ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে ১৪ কোটি ১১ লাখ টাকার স্থায়ী সম্পদ দেখিয়েছে। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সম্পদের রেজিস্টার ও হিসাব বই ঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করে না। এছাড়া তারা ওই সম্পদের ইমেপয়ারমেন্ট টেস্ট (বাজারদর যাচাই) করেননি। যাতে করে কোম্পানির প্রকৃত সম্পদ মূল্য যাচাই করা যায়নি।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দাবি করা ৮ কোটি ২ লাখ টাকার মজুদ পণ্যের সত্যতা নিয়েও সন্দেহ করেছেন নিরীক্ষক। কারন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওই মজুদ পণ্যের বিপরীতে লেজার বা সহায়ক প্রমাণাদি দিতে পারেনি। এমনকি মজুদ পণ্যের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে কারখানায় কোন মজুদ পণ্য পায়নি নিরীক্ষক।

এদিকে আর্থিক হিসাবে অগ্রিম/ডিপোজিট/প্রিপেমেন্ট হিসাবে ৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকার সম্পদ দেখিয়েছে মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক। তবে ওই অর্থ আদায় হবে না বলে নিরীক্ষক মনে করছেন। ফলে ওই অর্থ আর্থিক হিসাব থেকে বাদ দেওয়ার পরামর্শ নিরীক্ষকের। এতে করে কোম্পানির সম্পদ কমে আসবে।

এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের কাছে ৯০ লাখ টাকা পাবে বলে আর্থিক হিসাবে দেখিয়েছে। তবে ওই টাকা আদায় নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। ফলে প্রভিশনিং (সঞ্চিতি) গঠন করা উচিত। এছাড়া ব্যাংক ঋণ হিসেবে দেখানো ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার বিপরীতে লেজার, চুক্তি ও ঋণ নেওয়ার উদ্দেশ্য জানাতে বা দেখাতে পারেনি। আর হাতে নগদ ৯৯ লাখ টাকা আছে বলে আর্থিক হিসাবে উল্লেখ করলেও নিরীক্ষককে ক্যাশ বুক দিতে পারেনি।

দূর্বল এই কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করে কেটে পড়ছে উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা। যা করতে গিয়ে অনিয়মে জড়িয়েছে। তাদের কাছে কোম্পানিটির মোট ১ কোটি ৬০ লাখ শেয়ারের মধ্যে ৮০ লাখ ছিল। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে কমে এসেছে ৬০ লাখে। এই ২০ লাখ শেয়ার বিক্রি করলেও তারা আরজেএসসি সার্টিফাইড কপি নিরীক্ষককে দিতে পারেনি।

মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক কর্তৃপক্ষ দীর্ঘমেয়াদি ব্যাংক ঋণ হিসেবে ৬৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা দেখিয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা এ সংক্রান্ত কোন প্রমাণাদি দেখাতে পারেনি।

আর্থিক হিসাবে ব্যয়জনিত ৪৫ কোটি ১৯ লাখ টাকার দায় দেখানো হয়েছে। তবে এই দায়ের সঠিক হিসাব বহি নেই। ফলে ওই দায় নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি নিরীক্ষক।

তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটি থেকে শেয়ারহোল্ডারদের দীর্ঘদিন ধরে লভ্যাংশ প্রাপ্তি বন্ধ রয়েছে। কিন্তু অনেক বছর আগে ঘোষণা করা লভ্যাংশের ১৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকা এখনো প্রদান করেনি।

মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস)-১২ অনুযায়ি, ডেফার্ড ট্যাক্স হিসাব করে না বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক। এছাড়া তারা ডেফার্ড ট্যাক্স সমন্বয় ছাড়াই রিভ্যালুয়েশন সারপ্লাসের উপর ধার্য্য করা অবচয় রিভ্যালুয়েশন রিজার্ভ থেকে রিটেইন আর্নিংসে স্থানান্তর করে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৬২.৫৭ শতাংশ মালিকানা রয়েছে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের হাতে। বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) কোম্পানিটির শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ২৭.৫০ টাকায়।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে