ঢাকা, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

মূল ব্যবসায় পতন : শেয়ার ব্যবসা দিয়ে মুনাফায় উন্নতি

২০২৪ জুন ০৫ ১০:০০:২১
মূল ব্যবসায় পতন : শেয়ার ব্যবসা দিয়ে মুনাফায় উন্নতি

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ার ব্যবসায় ঝুঁকে পড়া লোহার পাইপ ফিটিংস ও ব্রেক ড্রামস উৎপাদনকারী আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই ২০২৩-মার্চ ২০২৪) পণ্য বিক্রি বা আয় কমেছে। তারপরেও কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে। যার পেছনে প্রধান কারন হিসেবে রয়েছে শেয়ার ব্যবসা থেকে মুনাফা অর্জন। তবে শেষ প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন ২০২৪) দেশের শেয়ারবাজারের অবস্থা খুবই খারাপ যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে কোম্পানিটির পুরো অর্থবছরে কি হবে, তা বলা মুশকিল।

১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের মূল ব্যবসা হচ্ছে গ্যালভানাইজড কারাজেটেড শীট, লোহার পাইপ ফিটিংস ও ব্রেক ড্রামস তৈরী ও বাজারজাত করা। তবে কিছু কোম্পানির ন্যায় এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষও শেয়ারবাজারের উত্থানে নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারেননি। তাই মূল ব্যবসা থেকে বেশি ঝুঁকে পড়েছেন শেয়ার ব্যবসায়।

দেখা গেছে, আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের আগের বছরের একইসময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে মুনাফা বেড়েছে ৯ শতাংশ। যার পুরোটাই এসেছে শেয়ার ব্যবসা থেকে। এই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা থেকে যেকোন সময় হোঁচট খাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। কারন শেয়ারবাজারের চলমান নেতিবাচক পতনে অন্যসব বিনিয়োগকারীর ন্যায় আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের শেয়ার ব্যবসা থেকে বড় লোকসানের শঙ্কা রয়েছে।

শেয়ারবাজারের দীর্ঘ অভিজ্ঞ এক ট্রেকহোল্ডার অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, মূল ব্যবসাকে বাদ দিয়ে কোন কোম্পানির শেয়ার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়া স্বাভাবিক লক্ষণ না। কিন্তু অনেক কোম্পানিতেই এমনটি হচ্ছে। এছাড়া ‘এ’ কোম্পানি থেকে ‘বি’ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ওই কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধি এবং ‘বি’ কোম্পানি থেকে ‘এ’ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ওই কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধির মতো কারসাজির ঘটনা ঘটছে। এক্ষেত্রে অনেকটা পরস্পর যোগসাজোশে এক কোম্পানি আরেক কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধিতে দায়িত্ব পালন করছে। যা দীর্ঘমেয়াদি শেয়ারবাজারের উন্নয়নের পথে বাধাঁ।

তিনি বলেন, মূল ব্যবসার পরিবর্তে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে সাময়িক লাভবান হওয়া যায়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সম্ভব না। এখানে রাতারাতি যেমন লাভ করা যায়, তেমনি রাতারাতি লোকসানও হয়। ওইসময় কোম্পানিকে লোকসানে পতিত হতে হবে। অতিত অভিজ্ঞতা এমনটিই বলে। তাই শেয়ারবাজারে একটি কোম্পানির কিছু বিনিয়োগ হতে পারে, কিন্তু মূল ব্যবসার থেকে বেশি না। যদি এমনটি কোন কোম্পানিতে হয়, সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদেরকে সচেতন হতে হবে।

স্বল্প মূলধনীর আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের ব্যবসাও ছোট। এছাড়া মুনাফাও আহামরি কিছু হয় না। কিন্তু শেয়ারটির দর উঠে গেছে অন্য উচ্চতায়। গত ৪ জুন লেনদেন শেষে শেয়ারটি দাঁড়িয়েছে ১২১ টাকায়। তবে এ শেয়ারটি একসময় ৪৬৪ টাকায় উঠে গিয়েছিল।

অন্যসব কিছু কোম্পানির ন্যায় আনোয়ার গ্যালভাইজিংয়েরও শেয়ারবাজারের প্রতি ঝুঁকে পড়ার কারন হিসেবে রয়েছে শেয়ার কারসাজি। নিজ কোম্পানির পাশাপাশি অন্য কোম্পানির কৃত্রিম দর বৃদ্ধির জন্য এমনটি করা হয়।

আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে নিট মুনাফা হয়েছে ১০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ৩.৫৪ টাকা। যে কোম্পানিটি শেয়ার ব্যবসা থেকে মুনাফা করেছে ৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। শেয়ারবাজার থেকে এই মুনাফা না করলে, তলানিতে থাকত ইপিএস।

কোম্পানিটির অনিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব অনুযায়ি, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে পণ্য বিক্রি হয়েছে ৫১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। যার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ৫৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এ হিসেবে বিক্রি কমেছে ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকার বা ৮ শতাংশ।

তারপরেও কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ৯ শতাংশ। এক্ষেত্রে পুরো ভূমিকা রেখেছে শেয়ারবাজার থেকে বড় ক্যাপিটাল গেইন অর্জন।

দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ৩.৫৪ টাকা। যার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ৩.২৬ টাকা। এ হিসাবে ইপিএস বেড়েছে ০.২৮ টাকা বা ৯ শতাংশ।

এর পেছনে প্রধান কারন হিসেবে রয়েছে শেয়ার ব্যবসা থেকে বড় মুনাফা। কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে শেয়ার ব্যবসায় মুনাফা হয়েছে ৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। যার পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছিল ৮৭ লাখ টাকা।

আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের চলতি অর্থবছরের ১ম প্রান্তিক শেষে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ কোটি ৮১ লাখ টাকায়। যার পরিমাণ আগের অর্থবছরের শেষদিন বা ৩০ জুন ছিল ২৮ কোটি ১৫ লাখ টাকায়।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে