ঢাকা, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

কিউআইওতে তুলবে ৫ কোটি টাকা

ব্রেইন স্টেশনের মুনাফার  বেশিরভাগ আসে রপ্তানি থেকে

২০২৪ জুলাই ১৫ ০৯:১০:১০
ব্রেইন স্টেশনের মুনাফার  বেশিরভাগ আসে রপ্তানি থেকে

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে আসতে যাচ্ছে দেশের বৃহৎ আইটি সেবা রপ্তানিকারক ব্রেইন স্টেশন ২৩ লিমিটেড। কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে ৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। যার মাধ্যমে বাড়ানো হবে ব্যবসার সম্প্রসারণ। যে কোম্পানিটি দেশের চেয়ে বিদেশে আইটি সেবা দিয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে।

শেয়ারবাজার থেকে টাকা নিয়ে কোম্পানিটির জন্য ১০২টি ল্যাপটপ/ডেস্কটপ ও ৪৬টি ম্যাকবুক প্রো কেনা হবে। এছাড়া নেটওয়ার্ক আইটেম সুইচ, নেটওয়ার্ক আইটেম-এপ্লিকেশন সার্ভার, নেটওয়ার্ক আইটেম-স্টোরেজ সার্ভার, ট্রান্সমিশ কন্ট্রোল প্রোটোকল এবং ওয়াইফাই সল্যুশন কেনা হবে।

শেয়ারবাজারে এসএমই বোর্ডে আসতে চায় ব্রেইন স্টেশন। যে কোম্পানিটির জন্য ৭ বছর আগে ৭০ টাকা প্রিমিয়ামে শেয়ার ইস্যু করেছিল কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এরপরে কোম্পানিটির গত ৭ বছরে ব্যবসায় আরও উন্নতি হয়েছে বলে আর্থিক হিসাবে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তারপরেও শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে শুধুমাত্র অভিহিত মূল্যে শেয়ার ইস্যু করতে চায় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

প্রসপেক্টাস অনুযায়ি, ব্রেইন স্টেশন অনেক প্রিমিয়াম পাওয়ার যোগ্য হলেও শুধুমাত্র অভিহিত মূল্যে শেয়ারবাজারে আসছে। যে প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালের জানুয়ারিতেই ৭০ টাকা প্রিমিয়ামে শেয়ার ইস্যু করেছে। এরপরে ৭ বছর পার হয়ে গেছে। এই সময়ের ব্যবধানে কোম্পানিটির ব্যবসায় অনেক উন্নতি হয়েছে। তারপরেও কোম্পানিটিকে অভিহিত মূল্যে ৫ কোটি টাকার শেয়ার ইস্যুর জন্য আনতে চাইছে ম্যানেজমেন্ট।

শেয়ারবাজার থেকে ৫ কোটি টাকা উত্তোলন করতে চাওয়া ব্রেইন স্টেশনের আর্থিক অবস্থা বেশ শক্ত। কোম্পানিটিতে কিউআইও চাহিদার কয়েকগুণ বেশি নগদ ও নগদ সমতুল্য অর্থ রয়েছে। কোম্পানিটির কাছে নগদ ২০ কোটি ১১ লাখ টাকা ও এফডিআর ২০ কোটি ২৯ লাখ টাকা টাকা রয়েছে। এই ৪০ কোটি ৪০ লাখ টাকার মধ্য থেকে খুব সহজেই কিউআইওতে আসতে চাওয়া ৫ কোটি টাকার চাহিদা মেটানো সম্ভব।

এদিকে দীর্ঘদিনের পথচলায় কোম্পানিটির আয় ও মুনাফায় উন্নতি হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ৪০ কোটি ৩৬ লাখ টাকার আয় ২০২২-২৩ অর্থবছরে হয়েছে ১২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এ থেকে ব্যয় শেষে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নিট মুনাফা হয় ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ২৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। যাতে ০.৮৯ টাকার শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) বেড়ে হয়েছে ৬.৪২ টাকা।

এদিকে কোম্পানিটির ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১ম প্রান্তিকে নিট মুনাফা হয়েছে ৮ কোটি ২১ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ইপিএস হয়েছে ১.৯২ টাকা।

ব্রেইন স্টেশনের আয়ের বড় অংশ আসে রপ্তানি থেকে। এ কোম্পানিটি থেকে ২০টির বেশি দেশে আইটি সার্ভিস দেওয়া হয়। দেখা গেছে, কোম্পানিটির ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১ম প্রান্তিকের ৩৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা আয়ের ১৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা বা ৫৯% এসেছে রপ্তানি থেকে। যা এসেছে মূলত সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট থেকে।

এমন ব্যবসার পরেও শুধুমাত্র অভিহিত মূল্যে শেয়ারবাজারে আসার বিষয়ে ব্রেইন স্টেশনের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো. মোসাব্বির আলম অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, অনেক বিদেশী কোম্পানি আমাদের কোম্পানিকে নিতে চায় এবং বিনিয়োগ করতে চায়। এ নিয়ে আমাদের কোম্পানিকে বিশ্বের কাছে বড় পরিসরে তুলে ধরার পরিকল্পনা আছে। তারই ধারাবাহিকতায় শেয়ারবাজারে আসা বলতে পারেন। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির গ্রহণযোগ্যতা আন্তর্জাতিকভাবেই বেশি। এছাড়া বিএসইসিও কয়েক দফায় আমাদের কোম্পানিটিকে শেয়ারবাজারে আনার জন্য বৈঠক করেছে। তাই কারো কারো আপত্তি সত্ত্বেও শেয়ারবাজার আসতে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, শুরুতে আমাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রিমিয়ামে শেয়ার ইস্যু করা। তবে প্রিমিয়াম নিতে চাইলে তালিকাভুক্ত হতে সময় লাগবে বলে অনেকে জানিয়েছেন। এছাড়া বিনিয়োগকারীদেরকে সুবিধা দেওয়ার বিষয়টিও মাথায় ছিল। তাই শুধুমাত্র অভিহিত মূল্যেই শেয়ারবাজারে শেয়ার ইস্যু করা হবে।

৪২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের ব্রেইন স্টেশনে ৮২ কোটি ৪৩ লাখ টাকার নিট সম্পদ রয়েছে। এক্ষেত্রে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৯.২৮ টাকায়। যাতে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা ১০ টাকা করে বিনিয়োগ করে শুরুতেই প্রায় ১৯ টাকার মালিকানা পাবে।

২০০৬ সালে পার্টনারশিপের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করা কোম্পানিটি ২০১৫ সালে প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে গঠিত হয়। এরপরে ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি পাবলিক কোম্পানিতে রুপান্তর হয়।

এ কোম্পানিটি মূলত আইটি এনএবলড সার্ভিসেস (আইটিইএস), সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার কাস্টমাইজেশন, ওয়েব হোস্টিং, আইটি সাপোর্ট ও সফটওয়্যার মেইনটেনেন্স করে থাকে। সর্ববৃহৎ আইটি সল্যুশন ও সফটওয়্যার রপ্তানিকারক এ কোম্পানিটিতে বর্তমানে ৭০০ জন স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে।

ব্রেইন স্টেশনের গ্রাহকের তালিকায় দেশী ও বিদেশী নামকরা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ তালিকায় বিদেশী কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- টেলিনর, পেপাল, মেটলাইফ, নিশান, ভার্চ্যুয়াল অ্যাফেয়ার্স ও এবভাই। আর দেশী গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে- সিটি ব্যাংক, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি, ইউসিবিএল ও এসিআই।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে