ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিএসইসির দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিচার দাবি

২০২৪ আগস্ট ১১ ২২:৩৭:৪৫
বিএসইসির দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিচার দাবি

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ও কমিশনের দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম ও দূর্নীতি তদন্ত এবং বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি কমিশনকে পুরো ঢেলে সাজানোর দাবি জানান তারা।

রবিবার (১১ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁও বিএসইসি কমিশন ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে এ দাবি জানান তারা।

বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভে ৭ দাবি জানিয়েছে-

১. স্বৈরাচারী শাসনকালের সর্বোচ্চ বেনিফিসিয়ারী, শেয়ারবাজার ধ্বংস করার মুল কুশীলব,শেয়ারহোল্ডারদের পথে বসানোর ঘৃণিত ব্যাক্তি বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের দূর্নীতির বিচার করা।

২. শেয়ারবাজারে লাগামহীন কারসাজি করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ফতুর করে দিয়েছেন আবুল খায়ের হিরো, এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমালসহ একটি চক্র। এ চক্রকে বিচারের আওতায় আনার দাবি।

৩. রোড শো’র আড়ালে টাকা পাচারের সুযোগ করে দেওয়া হয়। এসব সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের কোনো লাগেজ বিমানবন্দরে কাস্টমস পরীক্ষা করে না। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লাগেজে করে ক্যাশ ডলার পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে যেসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে সবচেয়ে বেশি কারসাজি হয়েছে, সেসব কোম্পানি বা তার উদ্যোক্তারা এসব রোড শো স্পন্সর করেছেন। সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে রোড শো বা বিনিয়োগ সম্মেলন হয়েছে। অর্থ পাচারের বিচার দাবি।

৪. শেয়ারবাজারে যেসব মধ্যবর্তী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দিয়েছেন, সেগুলো নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাজারকে সবচেয়ে সংবেদনশীল ও স্পর্শকাতর মনে করা হয়। এ বাজার পুরোটাই আস্থার উপর চলে। এ কারণে বাজার সংশ্লিষ্ট কোনো লাইসেন্স দেওয়ার আগে আবেদনকারীর যোগ্যতা, তার ভাবমূর্তি, অতীত রেকর্ড খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া হয়। কিন্তু এখানে লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুই বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। বেশিরভাগ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে আওয়ামীলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং তার নিজের ঘনিষ্ট ব্যক্তিদের। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক অপরাধের জন্য শাস্তিপ্রাপ্ত জাভেদ মতিন এবং দেশের শেয়ারবাজারে একাধিক কারসাজিতে অভিযুক্ত আবুল খায়ের হিরোর স্ত্রীকে ব্রোকারহাউজের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এ অনিয়মের তদন্ত করে শাস্তি দেওয়া।

৫. বন্ধ কোম্পানি চালুর উদ্যোগ ঘিরেই বড় কারসাজি ২০২০ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ারবাজারের প্রায় অর্ধশত লোকসানি ও বন্ধ কোম্পানির পর্ষদ বদলে কোম্পানিগুলোকে লাভজনকভাবে চালানোর উদ্যোগ নেয় বিএসইসি। এর মধ্যে কিছু কোম্পানির পর্ষদ ভেঙে নতুন করে স্বতন্ত্র পর্ষদ নিয়োগ করা হয়। আর কিছু কোম্পানির মালিকানা ও পরিচালনার দায়িত্বই বদলে দেওয়া হয়। আবার কিছু কোম্পানিকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এসব প্রক্রিয়াকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়ে শুরু হয় বড় ধরনের কারসাজি। মালিকানা বদল বা পর্ষদ বদলের খবরকে ঘিরে হু হু করে বাজারে দাম বাড়তে থাকে কিছু শেয়ারের।

এসব কোম্পানির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এমারেল্ড অয়েল, ফু-ওয়াং ফুড, হামি ইন্ডাস্ট্রিজ (সাবেক ইমাম বাটন), লিবরা ইনফিউশন, লিগেসি ফুটওয়্যার, পেপার প্রসেসিং, সোনালী পেপার, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজসহ আরও বেশি কিছু কোম্পানি। এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম এক–দুই বছরে কয়েক গুণ বেশি বেড়েছে। আগে বাজার থেকে একটি গোষ্ঠী কম দামে দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ার কিনে নেয়। পরে বিনিয়োগের নামে বিএসইসির সহযোগিতায় এসব কোম্পানির পর্ষদে জায়গা করে নেয় তারা। এরপর কোম্পানিকে লাভজনক করা ও নতুন নতুন বিনিয়োগের খবর দিয়ে বাজারে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়। কয়েক গুণ মূল্যবৃদ্ধির পর বেনামে কেনা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে ওই গোষ্ঠী বিপুল মুনাফা তুলে নেয়। কিন্তু কমসংখ্যক বন্ধ কোম্পানিরই অবস্থার বদল হয়েছে এ উদ্যোগে। ফলে দেখা যাচ্ছে, বন্ধ কোম্পানি চালুর এ উদ্যোগ মূলত শেয়ারবাজারে কারসাজির বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

এমনকি এ সুযোগ কাজে লাগাতে ওটিসি বাজারে থাকা বন্ধ কোম্পানি মাত্র কয়েক কোটি টাকায় কিনে নিয়ে নতুন শেয়ার ইস্যু ও পুনরায় সেসব কোম্পানিকে মূল বাজারে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের মাধ্যমেও কারসাজিতে জড়িয়ে পড়েছে একটি চক্র। এ চক্রকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৬. গত চার বছরে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের কারসাজিকারক হিসেবে সামনে চলে আসে একটি নাম আবুল খায়ের হিরু অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস। এ ছাড়া কারসাজির বিভিন্ন শেয়ারের সুবিধাভোগী ছিলেন শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ, যিনি তালিকাভুক্ত কোম্পানি সোনালী পেপারেরও চেয়ারম্যান। আরও যুক্ত ছিলেন এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল ও পরিচালক আদনান ইমামসহ আরও বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে শেয়ারের দাম বাড়ানোর ঘটনা ঘটাতেন আবুল খায়ের হিরু, যিনি সমবায় অধিদপ্তরের একজন সরকারি কর্মকর্তা। আর্থিক লাভের জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন তালিকাভুক্ত একাধিক কোম্পানির উদ্যোক্তারাও।

চক্রটি এনআরবিসি ব্যাংক, আইপিডিসি ফিন্যান্স, ফরচুন শু, জেনেক্স ইনফোসিস, সোনালী পেপার, ডেলটা লাইফ ইনস্যুরেন্সসহ বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় কারসাজির মাধ্যমে। বিএসইসির শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে ভালো যোগাযোগের সুবাদে চক্রটি বিশেষ সুবিধা পেয়েছে। একসময় বাজারে এমন প্রচারও হয়েছে যে এই চক্র যে শেয়ারে হাত দেয়, সেই শেয়ারেরই দাম বাড়ে লাফিয়ে। এ কারণে ২০২০-২০২১ সালে অনেক উদ্যোক্তা, শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের মালিকেরাও শেয়ারের দাম বাড়াতে এ চক্রের সঙ্গে যুক্ত হন।

এসব কারসাজিকারকদের বিরুদ্ধে কার্যকরি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বিএসইসি। এমনকি অনেক তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখও দেখেনি। এ কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিই আস্থার ঘাটতি তৈরি হয় শেয়ারহোল্ডারদের। এগুলো খতিয়ে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৭. কমিশন অনেক সংস্কার এবং বিদেশী বিনিয়োগ আনার চেষ্টার কথা বললেও বাজারের অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়েছে। বাজারে নতুন কোনো বিদেশী বিনিয়োগ আসেনি। বরং বিদ্যমান বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে টানা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ স্মরণকালের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে আছে। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ফ্লোরপ্রাইস নামের কৃত্রিম ব্যবস্থায় বাজারের পতন ঠেকিয়ে রাখতে হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের মতো দেশের পুঁজিবাজারে মূল্যসূচকের বড় উল্লম্ফন হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে পুরো বিপরীত অবস্থা। এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখে দোষীদেরকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে