ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

ডিএসইর উপকারে আসেনি দুই পয়সাও

ডিএসইর কর্মী হলেও কাজ করেন বিএসইসির প্রতিনিধি হিসেবে

২০২৪ আগস্ট ২৭ ১৫:৫৪:৩৯
ডিএসইর কর্মী হলেও কাজ করেন বিএসইসির প্রতিনিধি হিসেবে

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রধান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা (সিআরও)। স্বৈরাচার আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী লোকদের ব্যবহার করে ওই পদে চাকরী বাগিয়ে নেন অযোগ্য ও সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ। যিনি ডিএসই থেকে বেতনাদি নিলেও অন্যায়ভাবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রতিনিধির মতো দায়িত্ব পালন করতেন। যে কারনে তাকে বিএসইসির প্রতিনিধি হিসেবে ডাকা হয়। যিনি ডিএসইতে যোগদানের আগে মার্চেন্ট ব্যাংকে চাকরী করাকালীন সবচেয়ে বাজে কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে এনেছেন।

ডিএসইর জ্যেষ্ঠ এক ট্রেকহোল্ডার অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, গত কমিশন ডিএসইর পুরো কাঠামো নষ্ট করে দিয়েছে। কমিশনের ক্ষমতার অপব্যবহারে ডিএসইর নিজস্বতা বলে কিছু ছিল না। পর্ষদ থেকে শুরু করে ম্যানেজমেন্টেও তারা নিজেদের লোক বসিয়ে ছিল। যাদের একজন খায়রুল বাশার। যে ডিএসই থেকে মাসে কয়েক লাখ টাকার বেতনাদি নিচ্ছে। কিন্তু কাজ করেছে বিএসইসির হয়ে। তবে এসব অপকর্মের দিন শেষ। সে যাদের হয়ে কাজ করেছে, তারাই পদত্যাগ করে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। যাদের দোসর স্বতন্ত্র পরিচালকেরাও ডিএসইর পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করেছে স্বেচ্ছায়। এখন খায়রুল বাশারদের মতো লোকজনকেও ডিএসই থেকে বিদায় করা হবে। তবে বাশার যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে, তাহলে সম্মান নিয়ে যেতে পারবে। অন্যথায় অপমানিত হয়ে বিদায় নিতে হবে। যা করতে চাই না।

খায়রুল বাশার ২০২২ সালের ১২ জুন ৩ বছরের জন্য ডিএসইতে সিআরও পদে যোগদান করেন। এর আগে তিনি মার্চেন্ট ব্যাংক বা ইস্যু ম্যানেজার প্রতিষ্ঠান এমটিবি ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী পদে কর্মরত ছিলেন।

ডিএসইর এক পরিচালক অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, খায়রুল বাশারকে দিয়ে ডিএসইর দুই আনা উপকার হয় না। বরং বিগত কমিশন থাকাকালীন ক্ষতি হইছে। যাদের প্রভাব খাটিয়ে তিনি ডিএসইর সিআরও হয়েছেন। যার বিনিময়ে ডিএসইর তথ্য পাচার করতেন বাশার। যার যোগ্যতাতো নেই, পাশাপাশি বিবেকবোধ খুবই কম। তা না হলে ডিএসইর বর্তমান প্রেক্ষাপটে তিনি লম্বা ছুটি নিয়ে আমেরিকা যেতে পারতেন না। যেখানে ডিএসইর পর্ষদ ভেঙ্গে গেছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কেউ নাই। সেই মুহূর্তে তিনি ১ সপ্তাহ আগে ছুটিতে চলে গেছেন। যিনি আগামি ৭ তারিখে ফিরবেন। তবে এক্ষেত্রে একটা উপকার হচ্ছে সে না থাকায় বিদ্যুত বিল, পানি খরচ ইত্যাদি কম হচ্ছে। ডিএসইর উন্নয়নে এসব কর্মকর্তাদের ছাটাই করে সংস্কার করতে হবে। অন্যথায় ভালো কিছু আশা করা ঠিক হবে না।

ওইসময় খায়রুল বাশার জাহিন স্পিনিং, ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস ও কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের মতো কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনেন। এ ৩টি কোম্পানির মধ্যে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে অন্যায়ভাবে শেয়ারবাজারে আনতে যুক্ত ছিলেন বহুল বিতর্কিত নাফিজ সরাফাত। কোম্পানিটির আইপিও প্রক্রিয়ায় খায়রুল বাশারের ভূমিকা পালনে খুশি হন নাফিজ সরাফাত। যে কারনে তাকে পরবর্তী সময়ে ডিএসইর সিআরও হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে সহায়তা করেন। এছাড়া বিএসইসির সাবেক কমিশনার ও খায়রুল বাশারের বন্ধু অধ্যাপক শেখ সামসুদ্দিন তার ডিএসইতে নিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখেন। তিনি এখনো ডিএসইর সিআরওর দায়িত্বে রয়েছেন।

খায়রুল বাশারের আইপিওতে আনা ৩টি কোম্পানির মধ্যে জাহিন স্পিনিং ও ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস অস্বিত্ব সংকটে। কোম্পানি দুটির যাচ্ছে-তাই অ্যাকাউন্টস বানিয়ে শেয়ারবাজারে আনা হয়। এছাড়া কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ ব্যবসায় টিকে থাকলেও এ কোম্পানিটির ক্ষেত্রে অনেক অনিয়ম করা হয়।

আইপিওকালীন কপারটেকের আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়মের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিষয়টি আটকে যায়। নিরীক্ষকের বিষয়ে তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি)। এর ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষক আহমেদ অ্যান্ড আখতারকে নিষিদ্ধ করে আইসিএবি। কোম্পানিটির অনিয়ম নিয়ে রিপোর্টি করতে গিয়ে অনেক হুমকিও পেতে হয়েছে সাংবাদিকদের।

খায়রুল বাশারের হাত ধরে ২০১৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় জাহিন স্পিনিং। আইপিওতে ১২ কোটি টাকা সংগ্রহ করা কোম্পানিটির শেয়ার দর এখন অভিহিত মূল্যের নিচে ৭.৬০ টাকায়। যে কোম্পানিটি ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে লোকসানে রয়েছে।

খায়রুল বাশারের আরেক কোম্পানি ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডসও তালিকাভুক্তির পর থেকে ক্রমানয়ে ধংসের পথে। শেয়ারবাজার থেকে আইপিওতে ১৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করা এ কোম্পানিটির শেষ ২ অর্থবছর লোকসান হয়েছে। বন্ধ রয়েছে শেয়ারহোল্ডারদের প্রাপ্তি। তবে দূরবস্থার মধ্যে থাকা এ কোম্পানিটি অধিগ্রহণ করেছে এসএস স্টিলের জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেন। চেষ্টা করানো হচ্ছে ঘুরে দাঁড় করানোর।

ডিএসইর এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, খায়রুল বাশার বিএসইসির সাবেক কমিশনার ও তার বন্ধু শেখ সামসুদ্দিন এবং আওয়ামীলীগের নাফিজ সরাফাতের প্রভাব খাটিয়ে ডিএসইর সিআরও পদ বাগিয়ে নেন। তিনি নিজের যোগ্যতায় সিআরও হননি। এরচেয়েও ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে তিনি অযোগ্যতা নিয়ে ডিএসইর উচ্চ বেতনাদির সুবিধা নিলেও কাজ করেছেন বিএসইসির প্রতিনিধি হিসেবে। যিনি বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ও কমিশনার শেখ সামসুদ্দিনের হয়ে কাজ করতেন। ডিএসইর অভ্যন্তরীন বিষয়াদি সবসময় ওই দুজনকে জানাতেন খায়রুল বাশার। তারপরেও ডিএসইর কেউ কিছু বলতে পারেননি। কারন উনাকে কিছু বলার আগে বিএসইসি চেয়ারম্যান ও কমিশনারের বিষয়টি সবার আগে মাথায় চলে আসতো।

এসব বিষয়ে জানতে খায়রুল বাশারকে লিখিত দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশের সময় পর্যন্ত তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে