ঢাকা, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

বিএসইসিতে নামের তালিকা দিয়ে পাত্তা পেল না ডিএসই

স্বাধীন পরিচালক নিয়োগে স্বাধীনতা নেই ডিএসইর

২০২৪ সেপ্টেম্বর ০১ ২১:০৮:৪৫
স্বাধীন পরিচালক নিয়োগে স্বাধীনতা নেই ডিএসইর

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : পরিচালনা পর্ষদে স্বাধীন পরিচালক মনোনয়নের জন্য ৯ জনের নাম বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) জমা দেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নিজেদের স্বাধীন পরিচালক নিয়োগে স্বাধীনতা নেই দেশের এই প্রধান শেয়ারবাজারের। যাতে তাদের দেওয়া নামের তালিকা থেকে নয়, নিজেদের মতো করে নিয়োগ দিয়েছে বিএসইসি।

২০১৩ স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের পর থেকে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে ৭ জন স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। শুরুতে ১-২ বার ডিএসই কর্তৃপক্ষ তাদের পছন্দের লোকজনকে স্বাধীনভাবে স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ দেয়। কিন্তু এরপর থেকে প্রতিবারই বিএসইসির কর্তারা তাদের পছন্দের ব্যক্তিদেরকে স্টক এক্সচেঞ্জে স্বাধীন নামের তল্পিবাহক পরিচালক নিয়োগ দিয়ে আসছে। যে কারনে সম্প্রতী সরকার পতনের পরে স্বাধীন পরিচালকেরা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

এ বিষয়ে ডিএসইর এক পরিচালক অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, স্বাধীন পরিচালক নিয়োগে ডিএসইর মতামতকে কোন গুরুত্ব না দেওয়ায় শেয়ারহোল্ডার পরিচালকেরা এবং শেয়ারহোল্ডাররা খুবই হতাশ। এরমধ্যে বড় হতাশার কারন হচ্ছে স্বাধীন পরিচালক নিয়োগে বিএসইসি থেকেই নাম চেয়েছিল, আমরা দেওয়ার পরে তারা সেটাকে অবমূল্যায়ন করেছে। এতে করে শেয়ারহোল্ডারদের কাছে আমাদের আর মান-ইজ্জত থাকল না।

তিনি বলেন, বিএসইসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপে তিনি স্বাধীন পরিচালক নিয়োগে নাম দিতে বলেছিলেন। যা দিতে দেরি হওয়ায় বিএসইসির এক নির্বাহি পরিচালক যোগাযোগ করে নাম দেওয়ার তাগাদা দেন। এরপর দেওয়া হয়। কিন্তু বিএসইসি আমাদেরকে কোন মূল্যায়ন করল না। অথচ আমরা ডিএসইর মালিক। তারপরেও তারা যদি নিজেদের মতো করেই নিয়োগ দেবে, তাহলে আমাদের কাছে নাম না চাইলেই পারত।

রবিবার (০১ সেপ্টেম্বর) বিএসইসিতে স্বাধীন পরিচালক নিয়োগে নামের তালিকা জমা দেয় ডিএসই কর্তৃপক্ষ। তবে একইদিনে সেটাকে ছুড়ে ফেলে নিজেদের মতো করে মাজেদের মতো বিতর্কিত ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান করে ৭জনের স্বাধীন নামের পরাধীন পর্ষদ নিয়োগ দিয়েছে বিএসইসি।

ডিএসইর সিনিয়র এক শেয়ারহোল্ডার অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, আমরা কয়েকদিন ধরেই শুনতেছিলাম মাজেদুর রহমানকে চেয়ারম্যান করবে বিএসইসি। এ নিয়ে ডিএসইর পরিচালকসহ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে কয়েক দফায় মিটিং হয়েছে। এমনকি গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত মিটিং হয়েছে। যেখানে কেউই মাজেদুর রহমানকে চেয়ারম্যান হিসেবে চাননি।তারপরেও সেটাই আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হল।

ডিএসইর কর্তৃপক্ষের স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনয়নের জন্য ৯ জনের নাম জমা দেয়। এই ৯ জনের মধ্য থেকে ৭ জনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিতে বিএসইসিকে অনুরোধ করে।

তালিকার ৯ জনের মধ্যে ছিলেন-ফাহিম মাশরুর, সিলভানা কাদের সিনহা, অধ্যাপক শাবনাজ আমিন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মফিজুল ইসলাম রাশেদ, ড. শামস উদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিন (এফসিএ), মোবাস্সের মোনেম, কামরান টি. রহমান ও জাহিদুর রহমান।

এদের মধ্যে ফাহিম মাশরুর, সিলভানা কাদের সিনহা, অধ্যাপক শাবনাজ আমিন ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মফিজুল ইসলাম রাশেদ এর নাম আজকের তালিকায় ঢুকানো হয়েছে। এর আগে গত ২৯ আগস্ট ড. শামস উদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিন (এফসিএ), মোবাস্সের মোনেম, কামরান টি. রহমান ও জাহিদুর রহমানের পাঠানো হয়।

তবে বিএসইসি ডিএসইর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমানকে চেয়ারম্যান করে ৭ জন স্বাধীন নামের পরিচালক নিয়োগে দিয়েছে। অন্যরা হলেন- মেজর জেনারেল ডক্টর মোঃ কামরুজ্জামান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ডক্টর নাহিদ হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মফিজুল ইসলাম রাশেদ, সেন্টার অন ইনটিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যসিফিক (সিরডাপ) এর ডাইরেক্টর রিসার্চ ডক্টর মোঃ হেলালউদ্দিন, মেটলাইফ বাংলাদেশের সাবেক জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ হাম্মাদুল করীম এবং বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার ও ডিজাস্টার রিকভারী সাইট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোঃ ইসহাক মিয়া।

মাজেদুর রহমান ডিএসইর সাবেক এমডি। যাকে অধ্যাপক খায়রুল কমিশন তল্পিবাহক হিসেবে পূণ:নিয়োগ দেয়নি। যার বিরুদ্ধে একক ক্ষমতাবলে সিসিবিএলে আরও ৭-৮ বছর আগে ১৩০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের অভিযোগ আছে। যে প্রতিষ্ঠান এখনো আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়া পছন্দের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ক্ষেত্রে পদোন্নতি দেওয়া নিয়েও ছিল অভিযোগ। যিনি দেশীয় কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছে ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে গোপনে কম দামে শেয়ার বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন। যা ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্টদের প্রতিবাদের মুখে তার ওই উদ্যোগ বাতিল হয়ে যায়।

আরও পড়ুন....

বেক্সিমকোর সুকুকসহ ১২ কোম্পানির অনিয়ম তদন্তে বিশেষ কমিটি গঠন

ডিএসইর পর্ষদ নিয়োগের বিষয়ে বিএসইসি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, স্টক এক্সচেঞ্জ এর নমিনেশন অ্যান্ড রেমুনারেশন কমিটি (এনআরসি) কর্তৃক প্রস্তাব দাখিলের প্রেক্ষিতে কমিশন স্টক এক্সচেঞ্জ এর স্বতন্ত্র পরিচালক এর নিয়োগে অনুমোদন প্রদান করে থাকে। তবে ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক পদত্যাগ করায় বর্তমানে নমিনেশন অ্যান্ড রেমুনারেশন কমিটি(এনআরসি) নেই। এই কমিটি না থাকায়, স্বতন্ত্র পরিচালক নির্বাচন বিষয়ে ডিএসই হতে প্রস্তাব কমিশনে দাখিলের সুযোগ নেই। অধিকন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিচালক না থাকায়, নমিনেশন অ্যান্ড রেমুনারেশন কমিটি(এনআরসি) গঠনেরও সুযোগ নেই। সে প্রেক্ষিতে বর্তমানে স্বতন্ত্র পরিচালক না থাকায়, ডিএসই এর পরিচালনা পর্ষদ আইন অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকর নয়।

এর আগে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে গত ১৮ আগস্ট ডিএসই চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মো. হাসান বাবু পদত্যাগ করেন। পরে ২১ আগস্ট ৫ জন স্বতন্ত্র পরিচালক পদত্যাগ করেন। বাকি ১ জন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ ট্রান্সফার হয়ে যাওয়ায় পদটি খালি হয়ে যায়।

ডিএসই সূত্রে জানা যায়, ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদে ১৩ জন পরিচালক থাকবেন। এর মধ্যে ৭ জন হবেন স্বতন্ত্র পরিচালক। বাকি ৬ জনের মধ্যে ৪ জন ট্রেক হোল্ডারদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হয়ে আসবেন। এ ছাড়া ১জন কৌশলগত বিনিয়োগকারী পরিচালক ও ১জন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পরিচালক হিসেবে থাকবেন।

পরিচালক নিয়োগে ট্রেকহোল্ডার ও স্বতন্ত্রদের মধ্যে এই বৈষম্যের বিপক্ষে দাবি তুলে তুলেছে ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন (ডিবিএ)। অর্থ উপদেষ্টাকে দেওয়া তাদের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ঢাকা স্টক একচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন, ২০১৩ ও ঢাকা স্টক একচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিম-এর পুনঃমূল্যায়নসহ ডিএসই’র পর্ষদ পরিচালক নিয়োগে সমতা আনতে হবে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, স্টক একচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন, ২০১৩ ও ঢাকা স্টক একচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিম-এর অধীনে ডিএসই পর্ষদে ৭ (সাত) জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিধান রয়েছে। উক্ত ৭ জন স্বতন্ত্র পরিচালকের মধ্য থেকে পর্ষদ চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়।

অপরদিকে ডিএসই’র ২৫০ (দুইশত পঞ্চাশ) জন শেয়ারহোল্ডারদের প্রত্যক্ষ ভোটে ৪ (চার) জন শেয়ারহোল্ডার নির্বাচিত হয়ে পরিচালক হিসেবে পর্ষদে আসে। চেয়ারম্যানসহ ৭ (সাত) জন স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যাগরিষ্টতার ফলে ডিএসইসহ শেয়ারবাজারের যে কোন সিদ্ধান্তে তাদের একক আধিপত্য ও প্রভাব থাকে। স্বতন্ত্র পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের মধ্যে এমন সংখ্যাগত বৈষম্যের ফলে ডিএসইর কর্মকান্ড ও সিদ্ধান্তে ভিন্নতা ও বৈষম্য তৈরী হয়ে ২০১৩ সাল থেকে আজ ডিএসই একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে।

ডিএসইকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে এবং শেয়ারবাজারের উন্নয়নে ডিএসইর ভূমিকা জোরদার করতে অর্থ উপদেষ্টার ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের মধ্যে সমতা তৈরী করার দাবি জানানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে ৬ (ছয়) জন স্বতন্ত্র পরিচালক ও ৬ (ছয়) জন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক নিয়োগের বিধান রাখা এবং শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের মধ্য থেকে “চেয়ারম্যান” নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে