ঢাকা, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণায় লুব-রেফের কয়েক কোটি টাকার কৃত্রিম মুনাফা

২০২৪ সেপ্টেম্বর ০৫ ০৯:০৩:৪৯
বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণায় লুব-রেফের কয়েক কোটি টাকার কৃত্রিম মুনাফা

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে সাধারন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১৫০ কোটি টাকার বিশাল অর্থ উত্তোলনে প্রতারণার আশ্রয় নেয় লুব-রেফ বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে তারা শুধু অবচয়বাবদ কয়েক কোটি টাকার ব্যয় কমিয়ে দেখায়। এতে করে সমপরিমাণ নিট মুনাফা বৃদ্ধি পায়। এসব কোম্পানিকে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে প্রাইমারী মার্কেটে বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) স্টেকহোল্ডারদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র আর্থিক জরিমানা নয়, জেলে পাঠানোরও ব্যবস্থা করতে হবে।

লুব-রেফ বাংলাদেশ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ৩য়পর্ব তুলে ধরা হল আজ।

শেয়ারবাজার থেকে টাকা উত্তোলনে কোম্পানিগুলোর প্রতারণা অনেক পুরাতন ও প্রতিষ্ঠিত খবর। যা থেকে বের করে আনতে পারেনি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিগত কমিশনগুলো। যাতে কোম্পানিগুলো এখনো আয় বা পণ্য বিক্রি বেশি দেখিয়ে ও ব্যয় কমিয়ে কৃত্রিম মুনাফা দেখিয়ে থাকে।

এই প্রতারণা থেকে বাদ যায়নি লুব-রেফ বাংলাদেশও। ব্যবসায় হিমশিম খাওয়া এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ শেয়ারবাজারে আসার আগে কৃত্রিম মুনাফা দেখায়। যা তালিকাভুক্ত হওয়ার পরে বেশি করে ফুটে উঠেছে। এখন কোম্পানিটির ৯ মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয় ২৮ পয়সা। যে কোম্পানিটির প্রসপেক্টাস দেখেই বিভিন্ন অনিয়ম পেয়েছিল বিএসইসির তৎকালীন ক্যাপিটাল রেইজিং বিভাগের কর্মকর্তারা। যাদের কথাকে কর্ণপাত না করে দূর্বল লুব-রেফকে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দিয়েছিল বিগত কমিশন।

লুব-রেফ বাংলাদেশের এই প্রতারণায় সহযোগিতা করেছে বিতর্কিত ইস্যু ম্যানেজার প্রতিষ্ঠান এনআরবি ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট।

আরও পড়ুন....

সাড়ে ৫ কোটি টাকার জমিতে ৪৯ কোটি টাকার ভূয়া উন্নয়ন ব্যয়

বিএসইসির কোয়ারিতেও মিথ্যা তথ্য দেয় লুব-রেফ

লুব রেফের প্রসপেক্টাসের ৭৩ পৃষ্টায় শুরু হওয়া প্লান্ট অ্যান্ড মেশিনারিজ ক্রয়ের সিডিউলে আয়ুস্কাল ১৫-৩৫ বছর ধরা হয়েছে। অর্থাৎ সব প্লান্ট অ্যান্ড মেশিনারিজের অবচয় হার একরকম না। কিন্তু ২৪৫ পৃষ্টায় ক্রমহ্রাসমান (রিডিউসিং) পদ্ধতিতে এবং সব প্লান্ট অ্যান্ড মেশিনারিজকে ১০% হারে অবচয় চার্জ করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সঠিক অবচয় চার্জ করা হয়নি।

ক্রয়ের সিডিউল অনুযায়ি, ১৯ সালে বা ১৮-১৯ অর্থবছরের শেষার্ধে লুব-রেফের ৪৭ কোটি ২৭ লাখ টাকার প্লান্ট অ্যান্ড মেশিনারিজ কেনা হয়েছে। যার রিটেন ডাউন ভ্যালু বা অবচয় শেষে মূল্য হিসেবে ১৯ সালের ৩০ জুন ৪৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। এ হিসেবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কেনা ওই সম্পদের উপর ওই অর্থবছরে অবচয় চার্জ করা হয় ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ স্থায়ী সম্পদের অবচয় সিডিউলে তা দেখায়নি। অবচয় সিডিউলে ওই ৪৭ কোটি ২৭ লাখ টাকার প্লান্ট অ্যান্ড মেশিনারীজ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যুক্ত দেখানো হলেও তার উপরে ১ টাকাও অবচয় চার্জ করেনি। এর মাধ্যমে ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখানো হয়।

এছাড়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ অতিরঞ্জিত মুনাফা দেখানোর জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্লান্ট অ্যান্ড মেশিনারিজ ছাড়াও অন্য কোন কেনা সম্পদে অবচয় দেখায়নি। ওইসব সম্পদের উপর অর্ধেক অবচয় চার্জ করলেও হয় ১০ লাখ টাকা। তবে এর আগের অর্থবছরে দেখানো হয়।

প্রসপেক্টাস অনুযায়ি, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫০ কোটি ৩৮ লাখ টাকার প্লান্ট কেনা হয়। যার ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে রিটেইন ডাউন ভ্যালু ক্রয় সিডিউলে দেখানো হয় ৪৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২ অর্থবছরের অবচয় দেখানো হয় ২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। কিন্তু কোম্পানির নির্ধারিত ১০ শতাংশ হিসাবে ১ অর্থবছরেই অবচয় হয় ৫ কোটি ৪ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র ১ অর্থবছরেই অবচয় কম দেখানো হয় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সিডিউলে ওই সম্পদ ২ বছরে ব্যবহার (Used Life) করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। সে হিসেবে আরেক অর্থবছরেও কয়েক কোটি টাকার সম্পদ ও মুনাফা বেশি দেখানো হয়।

এ বিষয়ে জানতে লুব-রেফের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মফিজুর রহমানের যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে