ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

ডিএসইর সিআরও‘র ব্যর্থতায় মশিউর সিকিউরিটিজে ১৬১ কোটি টাকার জালিয়াতি: বিএসইসির শোকজ

২০২৪ সেপ্টেম্বর ২১ ১০:০০:৫৭
ডিএসইর সিআরও‘র ব্যর্থতায় মশিউর সিকিউরিটিজে ১৬১ কোটি টাকার জালিয়াতি: বিএসইসির শোকজ

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : বিতর্কিত ও সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (সিআরও)। যাকে আইনে ক্ষমতা দেওয়া হলেও দূর্বলচিত্তের হওয়ায় প্রয়োগ করতে পারেন না। যিনি অপেক্ষা করতেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিগত কমিশন কখন আদেশ দেবে, তখন তিনি কাজ করবেন। আর শেয়ারবাজারের জন্য ক্ষতিকর সত্ত্বেও নিষেধ করলে করতেন না। যার খেসারত দিতে হলো বিনিয়োগকারীদেরকে। এই সিআরও এর দায়িত্ব হওয়া সত্ত্বেও মশিউর সিকিউরিটিজ সরেজমিনে যাচাই না করায় বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছে ১৬১ কোটি টাকা।

এই ব্যর্থতার দায়ে ডিএসইর সিআরও খায়রুল বাশারকে শোকজ করেছে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বাশারকে বিএসইসিতে শোকজ করা হয়েছে।

জানা গেছে, খায়রুল বাশারের ব্যর্থতায় বিনিয়োগকারীদের ১৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে মশিউর সিকিউরিটিজ। এর মধ্যে গ্রাহকের সমন্বিত হিসাবে ঘাটতি (সিসিএ) ৬৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা এবং শেয়ার বিক্রি করে নিয়েছে ৯২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে একক কোনো ব্রোকারেজ হাউজের এটিই সবচেয়ে বড় জালিয়াতি।

মশিউর সিকিউরিটিজের মতো পিএফআই সিকিউরিটিজ ও সিনহা সিকিউরিটিজে একই ধরনের জালিয়াতি হয়েছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বিএসইসি। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা যা হারানোর, তা হারিয়ে ফেলেছে আগেই।

এ নিয়ে ডিএসইর এক কর্মকর্তা অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, খায়রুল বাশার মূলত সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেন এবং ঝুঁকি এড়িয়ে বা অন্যদের কাঁধে দিয়ে চলতে চান। যাকে আইনে ক্ষমতা দেওয়া হলেও তার প্রয়োগ করতে ভয় পান। এসব কারনেই মশিউর সিকিউরিটিজে বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। যাকে বিএসইসি চিঠি দিয়েও মশিউর সিকিউরিটিজে পরিদর্শন করানো সম্ভব হয়নি। তবে এর পেছনে বাশারের দাবি, তাকে বিএসইসির বিগত কমিশন মৌখিকভাবে পরিদর্শনে নিষেধ করেছিল। কিন্তু লিখিত নির্দেষের চেয়ে কারও ব্যক্তিস্বার্থে মৌখিক নির্দেশ বাস্তবায়ন কোন দায়িত্ববান কর্মকর্তার ব্যাখ্যা হতে পারে না বলে ডিএসইর ওই কর্মকর্তার দাবি।

এ বিষয়ে ব্রোকারেজ হাউজ সংশ্লিষ্ট এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, যেকোন ব্রোকারেজ হাউজের অর্থ জালিয়াতির বিষয়টি ডিএসই কর্তৃপক্ষ অফিসে বসেই যাচাই করতে পারে। কারন প্রতিটি ব্রোকারেজ হাউজকে মাসে একবার বাধ্যতামূলক রিপোর্ট ডিএসইতে জমা দিতে হয়। এছাড়া ডিএসই কর্তৃপক্ষ যেকোন সময় এ সংশ্লিষ্ট তথ্য চাইতে পারে। তাই সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করে রিপোর্ট আনতে হবে- এমন না। এখন আধুনিক যুগ। আর কারও মৌখিক আদেশে অন্যায় কাজ তদারকি বা বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে- এ জাতীয় কাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না, এটা খোঁড়া যুক্তি। এক্ষেত্রে অন্যকোন সমস্যা থাকতে পারে।

ডিএসইর গুরুত্বপূর্ণ সিআরও পদে স্বৈরাচার আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী লোকদের ব্যবহার করে ওই পদে চাকরী বাগিয়ে নেন অযোগ্য ও সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা খায়রুল বাশার। যিনি ডিএসই থেকে বেতনাদি নিলেও অন্যায়ভাবে বিএসইসির বিগত কমিশনের কয়েকজনের প্রতিনিধির মতো দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এই বাশার বিএসইসির সাবেক কমিশনার ও তার বন্ধু শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ এবং আওয়ামীলীগের নাফিজ সরাফাতের প্রভাব খাটিয়ে ডিএসইর সিআরও পদ বাগিয়ে নেন।

আরও পড়ুন......

ডিএসইর কর্মী হলেও বাশার কাজ করেন বিএসইসির প্রতিনিধি হিসেবে

খায়রুল বাশারকে দেওয়া শোকজ’র চিঠিতে বিএসইসি বলেছে, গত ১৪ মে ডিএসইকে মশিউর সিকিউরিটিজ পরিদর্শনের জন্য বিএসইসি নির্দেশ দেয়। যা শেষ করে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলে। কিন্তু এ কাজের জন্য দায়িত্বরত খায়রুল বাশার যথাসময়ে পরিদর্শন ও প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হয়। এক্ষেত্রে খায়রুল বাশার কমিশনের নির্দেশনা এবং ডিএসই রেগুলেশনস, ২০১৩ এর রেগুলেশনস ১৬(১০)(বি) ও ১৬(৩)(এ) পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ধারা ৭ ধারা প্রয়োগের আগে খায়রুল বাশারের কাছে মশিউর সিকিউরিটিজে ব্যর্থতার বিষয়ে তার কাছে ব্যাখ্যা শুনতে চায় কমিশন। তাই তাকে ব্যাখ্যা করার জন্য একটি সুযোগ দিয়ে সোমবার শোকজ করেছে। ওইদিন সকাল ১১টায় আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যর্থতার জন্য খায়রুল বাশারের বিরুদ্ধে কেনো ব্যবস্থা নেওয়া উচিত হবে না, এর কারন জানিয়ে শোকজে লিখিত ব্যাখ্যাও চেয়েছে কমিশন।

এ বিষয়ে খায়রুল বাশার অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যানের মৌখিক নির্দেশে ব্রোকারেজ হাউজ পরিদর্শন বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে দেরি হলেও পরবর্তীতে তদারকি দল (মনিটরিং টিম) মশিউর সিকিউরিটিজে ১৬১ কোটি টাকার ঘাটতি ধরে। যা নিয়ে বিএসইসিতে প্রাথমিক প্রতিবেদন বা চিঠি দেয়।

তিনি বলেন, শেষ ১ বছরে ডিএসইর তদারকি দল ১৪০টি ব্রোকারেজ হাউজ পরিদর্শন করেছে। এক্ষেত্রে সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে (সিসিএ) ১২০০ কোটি টাকার ঘাটতি পেয়েছে। যা করতে ডিএসইর দলটি দিন-রাত ক্লান্তহীনভাবে কাজ করেছে। এছাড়া অনিয়ম খুঁজে বের করার পরে সিকিউরিটিজ রেগুলেশনস অনুযায়ি দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিএসইসি থেকে ঘাটতি পূরনে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে সময় দেয় এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া থেকে ছাড় দেয়। দুঃখজনকভাবে এই সুবিধার অপব্যবহার করেছে মশিউর সিকিউরিটিজসহ কিছু ব্রোকারেজ হাউজ।

উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে মশিউর সিকিউরিটিজের ব্যাপারে বেশকিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে বর্তমান কমিশন। এর মধ্যে আছে মশিউর সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন, ‘ফ্রি লিমিট’সহ দেওয়া সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করা, পরিচালকদের ব্যাংক ও বিও হিসাব স্থগিত এবং জড়িত ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দেশ থেকে পালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের উদ্যোগ। এছাড়া তদন্তের পর আইন অনুসারে আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে