ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিএসইসির এফডিআর বাড়ছে: সংকুচিত হচ্ছে মধ্যস্থতাকারীরা

২০২৪ অক্টোবর ২২ ০৮:৪৭:১৯
বিএসইসির এফডিআর বাড়ছে: সংকুচিত হচ্ছে মধ্যস্থতাকারীরা

ইব্রাহিম হোসাইন (রেজোয়ান)

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) একটি অলাভজনক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা। যা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। তারপরেও সংস্থাটির বিভিন্নভাবে আয়ের মাধ্যমে নিয়মিত নিজস্ব তহবিল (ফান্ড) বাড়াচ্ছে। কিন্তু এর অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলো আয় কমে ও বিএসইসির নির্ধারিত বিভিন্ন ফি দিতে গিয়ে নিয়মিত সংকুচিত হচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠান এই বাজার থেকে ব্যবসা করে মুনাফা করার জন্য এসেছে।

শেয়ারবাজার গত কয়েক বছর ধরে মন্দা। এরমধ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ মন্দা চলছে। যে বাজার কখনো কখনো সাময়িকভাবে ভালো হলেও বেশিরভাগ সময় কাটে মন্দায়। এতে করে বাজার মধ্যস্থাতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকে থাকতেই হিমশিম খেতে হয়। তবে অনেক প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব বিলুপ্তুও হয়ে গেছে। কেউ কেউ ভালো কিছুর আশায় লোকসান দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছেন।

এই অবস্থায় প্রতিবছর বাজার মধ্যস্থাতাকারীদের পক্ষ থেকে বিএসইসির কাছে বিভিন্ন ধরনের ফি কমানোর আবেদন করা হয়। কিন্তু তা কখনোই রাখা হয়নি।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বিএসইসি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে আয় করার জন্য সরকার বিএসইসি প্রতিষ্ঠা করেনি। কোন আয় না হলেও বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতনাদি পাবেন। তারপরেও বিএসইসি যেভাবে নিজের আয়ের প্রতি আগ্রহী, সেটা ঠিক না। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির উচিত ফি কমিয়ে বাজার মধ্যস্থাতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করা।

শেয়ারবাজারে বিভিন্ন বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে-স্টক ব্রোকার ৪৫৬টি, স্টক ডিলার ৪২৮টি, সম্পদ ব্যবস্থাপক ৬০টি, মার্চেন্ট ব্যাংক ৬৮টি ও ফান্ড ম্যানেজার ২৬টি। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে নিট তহবিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪১৯ কোটি ২৭ লাখ টাকায়। যার পরিমাণ ওই অর্থবছরের শুরুতে ছিল ৪০৯ কোটি ১ লাখ টাকা। এভাবে প্রতিবছর নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির নিজস্ব তহবিল বাড়ছে।

বিএসইসির কাছে ওই অর্থবছর শেষে ২৬৯ কোটি ৪ লাখ টাকার নগদ ও নগদ সমতুল্য সম্পদ রয়েছে। এরমধ্যে ২৫৮ কোটি টাকা স্থায়ী আমানত বিনিয়োগ (এফডিআর) করা হয়েছে। আর ১১ কোটি ৪ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা রয়েছে।

এ বিষয়ে মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি ছায়েদুর রহমান অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, বিএসইসি একটি সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। প্রতিষ্ঠানটির কোন আয় না হলেও সব ব্যয় সরকার বহন করবে। এ অবস্থায় বিএসইসির ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি করার আসলে দরকার নেই। যেখানে বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের অবস্থা নাজুক। এক্ষেত্রে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের ফি কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিএসইসি ৭৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা আয় করেছে। এরমধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে জরিমানা থেকে বিএসইসির ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা আয় হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে ব্যাংকে জমা টাকার বিপরীতে সুদ থেকে। এ খাত থেকে আয় হয়েছে ২০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

ওই অর্থবছরে বিএসইসির ২য় সর্বোচ্চ আয় হয়েছে বার্ষিক ও নবায়ন ফি থেকে। এই খাত থেকে প্রতিষ্ঠানটির ১৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা আয় রয়েছে। এ ছাড়া কনসেন্ট বা সম্মতি ফি থেকে ১২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ও বি.ও অ্যাকাউন্ট ফি থেকে ৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা আয় হয়েছে।

এরপরে রেজিস্ট্রেশন ফি থেকে ৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, আবেদন ফি থেকে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা, অন্যান্যবাবদ ২ কোটি ৮ লাখ টাকা ও পুরাতন জিনিস বিক্রি থেকে ৩১ হাজার টাকা আয় হয়েছে।

এদিকে বিএসইসির ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৫৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রশাসনিক খাতে ২১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এরপরে ভাতাদিবাবদ সহায়তায় ১৮ কোটি ৮ লাখ টাকা, কর্মচারীদের বেতনাদিবাবদ ১০ কোটি ৮২ লাখ টাকা, আয়করবাবদ ৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ও সম্পত্তির অবচয়বাবদ ৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

এ হিসাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যয়ের থেকে ১৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বেশি আয় হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিএসইসি একটি সংবিধিবদ্ধ সংগঠন। যার খরচ মেটানোর জন্য বিএসইসি আইন-১৯৯৩ এর ১২ ধারা অনুযায়ি, একটি তহবিল রয়েছে। যে তহবিলে সরকারি অনুদান ও বিএসইসি’র নিজস্ব আয় থেকে অর্থের যোগান হয়। তবে সংস্থাটি গত ১৬ বছর বা ২০০৭-০৮ অর্থবছর থেকে নিজস্ব আয় দিয়ে চলছে। এক্ষেত্রে কোন ধরনের সরকারি অনুদান ছাড়াই নিজেদের সব ব্যয় পরিশোধ করছে তাদের আয় থেকে।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে