ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

স্বৈরশাসকের সুবিধাভোগী নাহিদকে সরকার শাস্তি দিলেও বিএসইসি পুরুস্কৃত করেছে

২০২৪ নভেম্বর ২৪ ০৯:৩০:৪৩
স্বৈরশাসকের সুবিধাভোগী নাহিদকে সরকার শাস্তি দিলেও বিএসইসি পুরুস্কৃত করেছে

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : স্বৈরশাসক আওয়ামীলীগের অনেক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা ও দূর্ণীতিবাজ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. নাহিদ হোসেনকে শাস্তির আওতায় এনেছে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যে নাহিদ আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পরেও শেয়ারবাজার নিয়ে ষড়যন্ত্র করে। এমন ব্যক্তিকে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়ে পুরুস্কৃত করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন। যে কমিশনকে নিয়োগ দিয়েছে বর্তমান সরকার।

নাহিদ ইসলাম বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াতের সরাসরি ছাত্র। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধাভোগী অর্থ মন্ত্রণালয়ের শেয়ারবাজার বিভাগের প্রধান ড. নাহিদ হোসেন। দীর্ঘদিন থেকে তিনি একই দায়িত্বে রয়েছেন। বিএসইসিতে চেয়ারম্যান হিসাবে শিবলী রুবাইয়াতের দ্বিতীয়বার নিয়োগে পূর্ণ সহায়তা করেন তিনি।

ড. নাহিদ ব্যক্তিগতভাবে শিবলী রুবাইয়াতের সহযোগী এবং আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম সুবিধাভোগী। তাকেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) স্বতন্ত্র পরিচালক করে বিএসইসি। সেটাও আইনের পরিপালন হয়নি বলে বিতর্ক আছে। ফলে তার নিয়োগের বিষয়টি শেয়ারবাজারের সবার মুখে মুখে ছিল। তারপরেও বর্তমান কমিশন তার নিয়োগে অটল থাকে।

অথচ ডিএসই রেগুলেশন, ২০১৩ এর ৫ ধারার (জে) উপধারায় বলা হয়েছে, কোন নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মী ডিএসইর স্বাধীন পরিচালক হতে পারবেন না। তারপরেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব থাকাকালীন ড. নাহিদ হোসেনকে ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক করে নিয়োগ দেয় বিএসইসি। অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া নাহিদ বিএসইসির কমিশনার ড. এটিএম তারিকুজ্জামানকে নিয়ে নজিরবিহীন ষড়যন্ত্র করে পদত্যাগে বাধ্য করান।

বিএসইসির বর্তমান কমিশন নাহিদের মধ্যে ভালো কিছু দেখতে পেলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাকে শাস্তির আওতায় এনেছে। প্রাথমিক ধাপে তাকে ওএসডি করা হয়েছে। এছাড়া সরকারের শাস্তির আওতায় আসা নাহিদকে পর্ষদ থেকে অপসারনের চিন্তা করছে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ।

গত ২০ নভেম্বর ডক্টর নাহিদ হোসেনকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন নিয়োগ শাখা থেকে বুধবার (২০ নভেম্বর) ওএসডি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জামিলা শবনম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

বর্তমানে নাহিদ দেশের বাহিরে রয়েছেন। যিনি পরিবারকে অস্ট্রেলিয়ায় সময় দেওয়ার জন্য গত ২০ অক্টোবর থেকে আগামি ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটি নিয়েছেন। কিন্তু শুরু থেকেই গুঞ্জন রয়েছে এই সুযোগে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কারন দেশে আসলে তাকে বিচারের আওতায় আসতে হবে।

ষড়যন্ত্রকারী নাহিদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নাম ভাঙ্গিয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর বিএসইসি সাবেক কমিশনার ড. তারিকুজ্জামানকে পদত্যাগে চাপ দেন। ফোন করে তিনি ড. তারিকুজ্জামানকে পদত্যাগ করতে বলেন। ওই সময় তিনি বলেন, ড. সালেহউদ্দিন তাকে দ্রুত ইমেইলে পদত্যাগপত্র পাঠাতে বলেছেন। ড. তারিকুজ্জামানও বিষয়টি অর্থ বাণিজ্যকে নিশ্চিত করেন। কিন্তু অর্থ উপদেষ্টার দপ্তর সূত্র গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে, এ ধরনের কথা তিনি বলেননি। অতিরিক্ত সচিবের এ ধরনের কাণ্ডে বিস্ময় প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়াও কমিশনার তারিকুজ্জামানের পদত্যাগ চেয়ে অর্থ উপদেষ্টার কাছে শিক্ষার্থীদের নাম করে একটি চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে কারও স্বাক্ষর নেই। যে ছাত্রদেরকে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বলে গুঞ্জন আছে।

ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারিকুজ্জামানকে পদত্যাগের জন্য গত ৯ সেপ্টেম্বর মোবাইল ফোনে কল করেন নাহিদ। ফোনে ড. নাহিদ বলেন, ‘অর্থ উপদেষ্টা আপনাকে পদত্যাগ করতে বলেছেন। রাতেই ইমেইলে পদত্যাগপত্র পাঠান।’ তারিকুজ্জামান বলেন, ‘ঠিক আছে, আমি কাল সকালে মন্ত্রণালয়ে এসে উপদেষ্টা মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করে তার হাতে পদত্যাগপত্র দেব।’ জবাবে ড. নাহিদ বলেন, ‘আপনি পদত্যাগের পর দেখা করেন, তিনি (অর্থ উপদেষ্টা) ব্যস্ত আছেন, কাল আপনি শিডিউল পাবেন না। তাছাড়া আপনি কিন্তু উপদেষ্টার নির্দেশনা না মেনে সরকারকে চ্যালেঞ্জ করছেন।’ তারিকুজ্জামান বলেন, ‘আমি সরকারকে চ্যালেঞ্জ করছি না, উল্টো সসম্মানে তার হাতে পদত্যাগপত্র দিতে চাচ্ছি।’

ড. নাহিদ বলেন, পদত্যাগের দুইদিন পর আপনি দেখা করেন।’ তবে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেননি তারিকুজ্জামান। এদিকে অর্থ উপদেষ্টার দপ্তর সূত্র গণমাধ্যমকে জানায়, উপদেষ্টা এ ধরনের কথা কাউকে বলেননি। কেউ বলে থাকলে এটি তিনি ব্যক্তিগতভাবে বলেছেন।

জানতে চাইলে ড. নাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) থেকে কাউকে পদত্যাগের জন্য ফোন দেওয়া হলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে দেওয়া হয়।’ তবে তার সঙ্গে এ বিষয়ে ড. তারিকুজ্জামানের কোনো কথা হয়নি। তিনি বলেন, বিএসইসি থেকে চিঠি দিয়ে এফআইডির একজন প্রতিনিধি চাওয়া হয়েছে। সে হিসাবে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে