ঢাকা, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিবলী রুবাইয়াত ও তার সহযোগিদের  বাঁচাতে আদালতে রাশেদ মাকসুদ

২০২৪ ডিসেম্বর ০১ ০৯:০৮:৪০
শিবলী রুবাইয়াত ও তার সহযোগিদের  বাঁচাতে আদালতে রাশেদ মাকসুদ

ইব্রাহিম হোসাইন (রেজোয়ান): নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এবং বিএসইসিতে তার ৮ জন সহযোগী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারনার অভিযোগে গত ৯ সেপ্টেম্বর দূর্ণীতি দমন কমিশনের (দুদক) মানি লন্ডারিং শাখা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে সেটা ধীরগতিতে চলছে। এছাড়া ওই ৮ কর্মকর্তা বিএসইসিতে স্বাভাবিক কর্ম পরিচালনা করছেন। এ অবস্থায় শিবলী রুবাইয়াত ও ৮ কর্মকর্তাকে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা ও ব্যাংক হিসাব জব্দ (ফ্রিজিং) চেয়ে রিট দায়ের করেন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মো. জিয়া উদ্দিন। একইসঙ্গে তদন্ত সঠিকভাবে করার জন্য রিটে ওই ৮ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের আবেদন করা হয়।

এর আলোকে গত ২৫ নভেম্বর উচ্চ আদালত শিবলী রুবাইয়াতসহ বিএসইসির ৮ কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব জব্দ ও বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে দুদককে নির্দেশনা দিয়েছে। এছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিএসইসিকে দুদকের চাহিদা অনুযায়ি সবধরনের তথ্য ও প্রমাণাদি দিয়ে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে।

আদালতের ওই নির্দেশনা স্থগিত চেয়ে ২৮ নভেম্বর সিভিল মিসেলানিয়াস পিটিশন (সিএমপি) দায়ের করেছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। এতে বলা হয়েছে, আদালতের ওই নির্দেশনা বিদ্যমান আইন ও আইনের নীতির সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ (কনফ্লিক্ট)।

সিএমপি- তে মাকসুদ বলেছেন, শিবলী রুবাইয়াত ছাড়া বাকি ৮জন বিএসইসির চাকরীরত কর্মকর্তা। তারা বিএসইসির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের বিরুদ্ধে যদি আদালতের গত ২৫ নভেম্বরের নির্দেশনা পরিপালন করা হয়, তাহলে শুধু তাদের ও তাদের পরিবারেরই বিপদে পড়বে না, বিএসইসির কার্যক্রমে সমস্যা তৈরী হবে।

সিএমপি- তে আরও বলা হয়েছে, ওই ৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদক এখনো উল্লেখযোগ্য কোন অনিয়ম খুঁজে পায়নি। এ অবস্থায় বিএসইসির ৮ কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হলে, তাদের পরিবার জীবন পরিচালনায় ভোগান্তিতে পড়বে। কারন তারা বিএসইসির বেতনের উপর নির্ভরশীল।

অথচ খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনই বাজার মধ্যস্থতাকারী অনেক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর আগেই ব্যাংক হিসাব জব্দ ও বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। যে কারনে অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মচারীরা বেতনাদি পাচ্ছেন না। যাদের পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের আড়াই ঘন্টা পর (১২টা ৪১ মিনিট) বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ লিখিত বক্তব্যে অর্থ বাণিজ্যকে জানিয়েছেন, “ BSEC এর আটজন কর্মকর্তা সংশ্লেষে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ রিট মামলায় যে আদেশ প্রদান করেছেন, উহার বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে আপীল দায়ের না করার জন্য কমিশনের পূর্ব সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায়, ইতিমধ্যে দাখিলকৃত পিটিশনটি প্রত্যাহার (Not press) করে নেয়ার জন্য আইনজীবিকে কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।”

অর্থাৎ ১ কার্যদিবসের ব্যবধানে পিটিশনটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার পিটিশন দাখিল করে রবিবার তা প্রত্যাহারের উদ্যোগ। যার পেছনে কারন হিসেবে রয়েছে গণমাধ্যমে পিটিশন দাখিলের খবর চলে আসা।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক এক কর্মকর্তা অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, রিট দায়ের করা হয়েছে বিএসইসির কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। যাদের বিরুদ্ধে দূর্ণীতির অনেক অভিযোগ আছে। ওই রিট কিন্তু বিএসইসির বিরুদ্ধে করা হয়নি। তাই নির্দেশনাও এসেছে কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে, বিএসইসির না। এই অবস্থায় ওইসব কর্মকর্তাদের পক্ষে আদালতের নির্দেশনা স্থগিত চেয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান রিট পিটিশন দায়ের করতে পারে না।

ডিএসইর সাবেক ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বিভিন্ন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ নিজেদের ঘর (বিএসইসি) থেকেই দূর্ণীতির বিরুদ্ধে সবার আগে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। একজন বিএসইসির কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেননি। বরং তাদের রক্ষায় কাজ করছেন তিনি।

দুদক শিবলী রুবাইয়াত ছাড়া বিএসইসির যে ৮জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন- সাবেক কমিশনার শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক মোঃ মাহবুবুল আলম, নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম, পরিচালক শেখ মাহবুবুর রহমান, পরিচালক মোঃ মাহমুদুল হক, অতিরিক্ত পরিচালক এস কে মোহাম্মদ লুৎফুল কবির ও যুগ্ন পরিচালক ও চেয়ারম্যানের সাবেক একান্ত সহকারি মো. রাশিদুল আলম (বর্তমানে অন্য বিভাগে নিয়োজিত)।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে দূর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইন ও বিধিমালা লংঘন করে স্ব স্ব নামে ও তাদের পরিবারের পরিজনের নামে বেনামে দেশে ও বিদেশে (সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে) উৎস বহির্ভূত ১০০০ কোটি টাকা সম পরিমান স্থাবর, অস্থাবর, অবৈধ সম্পদের অভিযোগ রয়েছে। যা অনুসন্ধান/তদন্ত করে ওইসব অবৈধ সম্পদ ক্রোক/ফ্রিজ করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

এইসব অভিযোগ আমলে নিয়ে দূদকের মানি লন্ডারিং শাখা দুদক উক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে