ঢাকা, বুধবার, ১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩১

পলাতক জাভেদের এসএস স্টীলে কোটি কোটি টাকার নয়ছয়

২০২৪ ডিসেম্বর ২৮ ২০:৪৩:৫৫
পলাতক জাভেদের এসএস স্টীলে কোটি কোটি টাকার নয়ছয়

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারের একটি বিতর্কিত নাম জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেন। যিনি দূর্বল কোম্পানিকে অতিরঞ্জিত করে শেয়ারবাজারে আনেন। যেগুলো তালিকাভুক্তির কয়েক বছরের মধ্যে রুগ্ন হয়ে উঠে। এরকমই একটি কোম্পানি এসএস স্টিল। যে কোম্পানিটির শ্রমিকদের কোটি কোটি টাকার কোন হদিস নেই। একইসঙ্গে হদিস নেই আওয়ামীলীগের সুবিধাভোগী জাভেদেরও। যিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে সঙ্গে দেশ থেকে পালিয়েছেন।

জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেনের শেয়ারবাজারে অপকর্মের আজ তুলে ধরা হল প্রথম পর্ব। এরপরে পরবর্তী পর্ব তুলে ধরা হবে।

অনিয়মের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত থাকা জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেন আওয়ামীলীগের ক্ষমতা ব্যবহার করেছে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে, অর্থ পাাঁচার করতে এবং বিএসইসি থেকে সুবিধা পেতে। যিনি শেখ হাসিনার মতো দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কারন তার অর্থ পাঁচারসহ শেয়ারবাজারের বিভিন্ন অনিয়ম বিচারের আওতায় আনা হলে শাস্তির মধ্যে পড়তে হবে।

জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেন জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনের পরে এসএস স্টিলকে শেয়ারবাজার আনেন। যিনি জেনারেশন নেক্সটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরে কোম্পানিটি থেকে বেরিয়ে গেছেন। যে কোম্পানিটি এখন ধুকে ধুকে চলছে।

আইপিওকালীন জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে ছিলেন জাভেদ অপগেনহ্যাপেন। আইপিওকালীন কোম্পানিটিতে তার ৯৩ লাখ ১০ হাজার বা ১০.৬৮ শতাংশ শেয়ার ছিল। যিনি এই শেয়ারের উপর ২০১১ ও ১২ সালে ২০ শতাংশ করে ৪০ শতাংশ বোনাস শেয়ার নেন। যা ২০১৩ সালে রাইট শেয়ারের আবেদনের আগেই বিক্রয় করে দেন। এছাড়া পরবর্তীতে প্রাপ্ত বোনাস শেয়ারসহ সব বিক্রয় করে দিয়েছেন।

এরপরে জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেন শেয়ারবাজারে আনেন এসএস স্টিল। দূর্বল এ কোম্পানিটিকে শেয়ারবাজারে আনতে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে ব্যয় করেন। এক্ষেত্রে তিনি শেয়ার ও নগদ অর্থ লেনদেন করেন। যে কোম্পানিও এখন দূর্বল। তবে কোম্পানির নামে আছে হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ। যা ব্যবহার করেন ব্যক্তিগত কাজে।

বর্তমানে জাভেদের আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে আনা তার এসএস স্টিল কোম্পানিটি রয়েছে। যে কোম্পানিটির অবস্থা খুবই শোচণীয়। যেকোন সময় যেকোন কিছু ঘটতে পারে। ভূয়া প্লেসমেন্টের মাধ্যমে অতিরঞ্জিত করে কোম্পানিটিকে শেয়ারবাজারে আনা হয়েছিল। ২০২০ সালে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে প্লেসমেন্ট ইস্যু করা ১ কোটি ৮০ লাখ শেয়ার আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ উঠলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ওই শেয়ার ফ্রিজ করে দেয়।

কোম্পানিটির আর্থিক হিসাব নিয়ে নিরীক্ষকের নিরীক্ষাতেও উঠে এসেছে বিভিন্ন অনিয়ম। যা তদন্ত শেষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে বিএসইসি।

অনিয়মের বিষয়ে শেয়ারাবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, অর্থবছর শেষে নিরীক্ষকের মতামতসহ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদন কমিশনে আসে। যা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যাচাই-বাছাই করে। এতে কোন অনিয়ম বা অসঙ্গতি পেলে, কমিশন আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এসএস স্টিলেও তার ব্যতিক্রম হবে না।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, কোম্পানিটির ২০২৪ সালের ৩০ জুন ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ডে (ডব্লিউউপিপিএফ) দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা। কিন্তু এ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে এ পরিমাণ অর্থ নেই। এমনকি ওই অর্থ কোথায় এবং কার কাছে আছে, তার হদিস পাননি নিরীক্ষক। যে ব্যাংক হিসাব পরিচালনার জন্য কোম্পানিটিতে কোন ট্রাস্টি নেই।

নিরীক্ষক আরও জানিয়েছেন, কোম্পানিটিতে শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসেবে ৫৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা রয়েছে। তবে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) নির্দেশনা অনুসারে, শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসেবে অর্থ গ্রহণের ৬ মাসের মধ্যে সেই অর্থ শেয়ার ক্যাপিটালে রুপান্তর (কনভার্ট) করতে হয়। যা না করে এফআরসির নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছে এসএস স্টিল কর্তৃপক্ষ।

কোম্পানিটির ক্যাপিটাল ওয়ার্ক-ইন-প্রগ্রেস (সিডব্লিউআইপি) ভুল তথ্য দেওয়া আছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক। যা নিয়ে গত অর্থবছরের আর্থিক হিসাবেও আপত্তি জানিয়েছিল নিরীক্ষক।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, এসএস স্টিল কর্তৃপক্ষ প্রতি মেট্রিক টনে ২০০০ টাকা সঞ্চিতি গঠন করা দরকার। যা না করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ অতিরঞ্জিত মুনাফা ও অনেক দায় কম দেখিয়েছে।

এ কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে ৪৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকার ডেফার্ড ট্যাক্স দায় দেখানো হয়েছে। তথ্যের অভাবে ডেফার্ড ট্যাক্সের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি নিরীক্ষক।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এসএস স্টিলের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩২৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে ৬৯.০৬ শতাংশ মালিকানাই রয়েছে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের হাতে। কোম্পানিটির শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৮.৮০ টাকায়।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে