ঢাকা, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

সিকদারের পরিবারের হাতে বিনিয়োগ ঝুঁকি

ন্যাশনাল ব্যাংক ধ্বংস করে আনছে সিকদার ইন্স্যুরেন্স

২০২৩ অক্টোবর ১০ ১১:১৪:১২
ন্যাশনাল ব্যাংক ধ্বংস করে আনছে সিকদার ইন্স্যুরেন্স

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল ব্যাংক। যা এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে রায়েরবাজারের সিকদার পরিবার। যারা এরইমধ্যে খামখেয়ালি ও অনিয়মের রাজত্ব কায়েমের মাধ্যমে ব্যাংকটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এতে করে লোকসান গুণছে বিনিয়োগকারীরা, ক্ষতিগ্রস্থ শেয়ারবাজার। এবার সেই সিকদার পরিবারেরই আরেক কোম্পানি সিকদার ইন্স্যুরেন্সকে শেয়ারবাজারে আনার অনুমতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, ন্যাশনাল ব্যাংক ধ্বংসের জন্য সিকদার পরিবার প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তারা এককভাবে ব্যাংকটি নিয়ন্ত্রণ করে। যে কারনে ব্যাংকটিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) টিকতে পারে না। এছাড়াও তারা আরেকটি ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ কেলেঙ্কারীতে বহূল সমালোচনার জন্ম দেয়। যা নিয়ে সিকদারের পরিবারের সদস্যদের বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। আর তাদেরনিয়ন্ত্রিত সিকদার ইন্স্যুরেন্সকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগকে ঝুঁকিতে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।

শেয়ারবাজারে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২১৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক। তবে ঋণ অনিয়মের কারনে ব্যাংকটির প্রভিশনিং করতে গিয়ে ২০২২ সালে বড় লোকসান হয়েছে। যা কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের থেকেও বেশি। এছাড়া ২০২১ সাল থেকে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রদান বন্ধ হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন.....

অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে কোটি কোটি টাকার ভূয়া প্লেসমেন্ট

দেখা গেছে, ন্যাশনাল ব্যাংকের ২০২২ সালের ব্যবসায় ৩ হাজার ২৬১ কোটি ৬০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকটির চলতি বছরের প্রথমার্ধে ৬২৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। যাতে করে ব্যাংকটির সংরক্ষিত আয় (রিটেইন আর্নিংস) ১ হাজার ৪৬৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ঋণাত্মকে চলে গেছে।

তারপরেও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংকের। ব্যাংকটির সঞ্চিতি ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। গত জুন শেষে ব্যাংকটির এই অবস্থা দাঁড়িয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে উঠে এসেছে।

সিকদার পরিবারের অনিয়ম ও খামখেয়ালিতে একটি ব্যাংক ধ্বংস হয়ে যাওয়ার তথ্য জানার পরেও তাদেরই সিকদার ইন্স্যুরেন্সকে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিএসইসির ৮৮২তম সভায় শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কোম্পানিটি প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যে ১ কোটি ৬০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে শেয়ারবাজার থেকে ১৬ কোটি উত্তোলন করবে। যা দিয়ে ফিক্সড ডিপোজিট, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ, ফ্লোর ক্রয় এবং আইপিও ব্যয় নির্বাহ করবে।

এর আগে গত ২৬ এপ্রিল বিএসইসি কোম্পানিটির ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো বা সিআইবি প্রতিবেদন পরিচ্ছন্ন না পাওয়ায় বা ঋণ খেলাপি হওয়ায় আইপিওর আবেদন বাতিল করেছিল। যা সংশোধন করে ফাইল জমা দেওয়ার পরে কোম্পানিটি আইপিও অনুমোদন পেয়েছে। কিন্তু অর্থ উত্তোলনের খেলাপি হয়ে গেলে কমিশনের কিছু করার থাকবে না। অধিকাংশ ঋণ খেলাপিরাই শেয়ারবাজারে আসার আগে কিস্তি প্রদানের মাধ্যমে সাময়িকভাবে ঋণ সমস্যা সমাধান করে আসে। যা পরবর্তীতে গিয়ে আবার খেলাপি হয়ে যায়।

সিকদার ইন্স্যুরেন্সের বর্তমানে শতভাগ মালিকানায় সিকদার পরিবার। বীমা কোম্পানিটির ২৪ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন রয়েছে। এর মালিকানায় রয়েছে ১৪জন। যারা সিকদার পরিবারের।

এই কোম্পানিটিকে শেয়ারবাজারে আনতে ইস্যু ব্যবস্থাপনার কাজ করছে সোনার বাংলা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে