ঢাকা, বুধবার, ৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১

পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে পলিসি সাপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ-ডিএসই চেয়ারম্যান

২০২৫ জানুয়ারি ০৭ ২২:১৯:৫৬
পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে পলিসি সাপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ-ডিএসই চেয়ারম্যান

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, ভাল প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজারে না আসার কারণ খুঁজে এটি থেকে উত্তরণের জন্য কাজ করতে হবে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনগুলোর বিশ্বস্ততা বৃদ্ধি করার জন্য এফআরসির ভূমিকা রাখতে হবে। আমাদের মার্কেট ইন্টারমিডিয়ারিজের ক্যাপাসিটি ও গভর্ন্যান্সকে শক্তিশালী করতে হবে। আমাদের বর্তমানের পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা ফেরানোর জন্য ফিসক্যাল পলিসি সাপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রিজিওন্যাল মার্কেটের যে সমস্ত বিষয় প্রচলিত রয়েছে সেগুলোতে অনুসরণ করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করতে চাই।

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) নিকুজ্ঞে ডিএসই টাওয়ারে পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও উন্নয়নের রোডম্যাপ বিষয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। এতে উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন৷ বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ৷

গোলটেবিল বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন ডিএসই’র চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম৷ এতে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনারবৃন্দ, বাংলাদেশ ব্যাংক, ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ, ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড, ডিএসই ব্রোকারস এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন, অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ড এবং ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি’র শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিবৃন্দ।

বৈঠকের শুরুতেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, বিগত দিনে অদক্ষতা এবং দুর্নীতির কারণে আমাদের পুঁজিবাজার সংকুচিত হয়ে আছে এবং আমাদের অর্থনীতির জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারছে না। কিন্তু বর্তমান সরকার আসার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টক এক্সচেঞ্জ ও মার্কেট ইন্টারমিডিয়ারিজ একযোগে কাজ করছে। আমরা আশা করছি পুঁজিবাজার খুব শীঘ্রই তার সুফল ভোগ করবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ডিএসই’র মার্কেটক্যাপের ৫৪% এখনও ইক্যুইটি। এখানে এখনও তালিকাভুক্ত কর্পোরেট বন্ড এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সংখ্যা অনেক কম। কর্পোরেট বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি করা এখন একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়। আমরা হয়তো নতুন প্রোডাক্টের দিকে যাব, কিন্তু মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং বন্ড মার্কেট যেহেতু তেমন কার্যকর হয়নি, সেহেতু নতুন প্রোডাক্টের দিকে এখনই নজর না দিয়ে এগুলোর উন্নয়নের জন্য আরও কাজ করা উচিত। গত ১০ বছরে আইপিও’র মাধ্যমে প্রতিবছর গড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলন করা হয়েছে । ফ্লোর প্রাইস আরোপের মতো কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আশা করি রেগুলেটর ভবিষতে এই ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকবে।

ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের মার্কেট ক্যাপ টু জিডিপি রেশিও পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় অনেক কম। এটিকে বৃদ্ধি করার উপায় বের করতে হবে। আমাদের মার্কেটের আকারের তুলনায় ইন্টারমিডিয়ারিজ এর সংখ্যা অনেক বেশি । যার ফলে রেগুলেটরদের পক্ষে তাদের মনিটর করা অনেক কঠিন।

শিল্প ঋণের বিষয়ে ডিএসই’র চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, দেশের শিল্প উদ্যোক্তারা দীর্ঘমেয়াদী শিল্প ঋণের জন্য ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি ফ্রেমওয়ার্কের সংশোধনের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের পুঁজিবাজার মুখী করার উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। অতীতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজারে যে অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছে ভবিষ্যতে এ রকম যাতে না হয় সেজন্য রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্কে সংস্কার করতে হবে। রেগুলেটর অপারেটরের ভূমিকায় চলে আসলে এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম সংকুচিত হয়ে যায়।

আরও পড়ুন....

এনআরবিসি ব্যাংক লুটেরাদের সহযোগী ছিলেন রাশেদ মাকসুদ : তদন্তে দুদক

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক (Nazma Mobarek) বলেন, এখানে মাননীয় অর্থ উপদেষ্টাসহ এনবিআর, এফআরসি, ইডরা, মার্চেন্ট ব্যাংক, আইসিবি সহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারের উপস্থিতিতে এ ধরনের একটি সম্মিলিত আলোচনা এবং সকলের মতামত পাওয়া সত্যিকার অর্থেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান যেমনটা বলেছেন যে, এই সময়টা হচ্ছে সংস্কারের সময়। এখন পর্যালোচনার সময় এসেছে কোথায় আমাদের গ্যাপ আছে, কোথায় চ্যালেঞ্জ আছে, এগুলো মোকাবেলা করার জন্য কি কি কৌশল অবলম্ভবন করা যায়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া।

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো সর্ট টার্ম ডিপোজিট নিয়ে লং টার্ম ঋণ দিচ্ছে। এখানে ম্যাচ্যুউরিটি মিসম্যাচ হচ্ছে। এই ম্যাচ্যুউরিটি মিচম্যাচের কারণে আমাদের ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ব্যাংকগুলোকে হেলদি রাখার জন্য লংটার্ম ফাইন্যান্সিং ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে করতে হবে। এজন্য আমাদের বিএসইসি’র চেয়ারম্যান ইতমধ্যেই বলেছেন যে, আমাদের ফিসক্যাল পলিসি সাপোর্ট দরকার। আমরা দেখেছি লিস্টেড কোম্পানি এবং নন-লিস্টেড কোম্পানি এদের মধ্যে ট্যাক্স ডিফারেন্স খুব একটা বেশি না। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহ কম থাকে। এখানে এনবিআর কর্তৃপক্ষ আছেন, তারা দেখতে পারে কিভাবে ট্যাক্স বেনিফিট দিয়ে কোম্পানিগুলোর আগ্রহ বাড়ানো যায়। আমরা মনে করছি, এখানে আলোচনার মাধ্যমে একটা যৌক্তিক অবস্থানে পৌঁছাতে পারবো। এছাড়াও একটা কোম্পানিকে আইপিও’র মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসতে অনেক প্রসিডিউর, কমপ্লায়েন্স এবং দীর্ঘপক্রিয়া পার করতে হয়। তাই এই পক্রিয়া সহজ করে কিভাবে ভালো কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা যায় সেদিকেও আমরা নজর দিতে পারি।

পুঁজিবাজার বিষয়ক ট্রাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান এ. কে. এম মাজেদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা। এই অব্যাহতির পেছনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অবদান রয়েছে। এই অব্যাহতি যেমন দিতে হবে, একইসাথে ট্যাক্স আদায়ও করতে হবে। এখন আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে। তাই এই বিষয়টি নজরে রাখতে হবে। একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ৫ শতাংশ ট্যাক্স ডিফারেন্স এর জন্য পুঁজিবাজারে আসতে চাইবে না। তাই এই ট্যাক্স ডিফারেন্স কমপক্ষে ১০ শতাংশ করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, অনেক আগে এফডিআই-তে ৩২ টা কোম্পানি একটা তালিকা করা হয়েছিল। সেখানে গভার্নমেন্টের কিছু কোম্পানিকে ডাইরেক্ট লিস্টিং এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা কথা বলা হয়েছিল। সে বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে।

বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রসঙ্গে মাজেদুর রহমান বলেন, ফরেন ইনভেস্টরদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ডাবল টেক্সেশন (double taxation) বিষয়টা নজর দিতে হবে। আমাদের ফান্ডামেন্টাল যে ইস্যুগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে ট্রান্সফোর্স কাজ করছে। আমাদের রিটেইল ইনভেস্টরা না জেনে বুঝে বিনিয়োগ করে ক্ষতির সম্মুখিত হয়। সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। এই বিনিয়োগগুলো যদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট এর মাধ্যমে আসে, সেই বিষয়ে আমরা আস্তে আস্তে কমিশনের মাধ্যমে পদক্ষেপ নিতে পারি।

সিসিবিএল এবং সিডিবিএল কে একত্রীকরণ করে তাদের কার্যক্রম কিভাবে আরও কার্যকর করা যায়, সে ব্যাপারেও কাজ করা যেতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটে ৬০০ এর বেশি ইন্টারমেডিয়ারিজ আছে। এক্ষেত্রে আর যেন অতিরিক্ত লাইসেন্স ইস্যু করতে না পারা যায় তার একটি প্রদ্ধতি প্রনয়নের ব্যাপারে নজর দেয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন।

ডিএসই'র পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, বিএসইসি সততার জায়গায় যদি সঠিকভাবে কাজ করে, তবে বাজারের উন্নয়ন তরান্বিত হবে। দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে যদি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয় বিবেচনা করা হয়, তাহলে পুঁজিবাজার দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘুড়ে দাঁড়াবে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মাজেদা খাতুন বলেন, আমাদের দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়নের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার থেকে এক শতাংশের কম অর্থায়ন হয়। সরকারের অর্থায়ন পলিসিতে পুঁজিবাজারকে অন্তর্ভূক্ত করা হয় তাহলে অনেক ভাল হবে। বর্তমানে আরজেএসসিতে দুই লক্ষের অধিক কোম্পানি রেজিস্ট্রার্ড রয়েছে, সে কোম্পানিগুলোর কাজ করার ক্ষেত্রে মার্চেন্ট ব্যাংকে সুযোগ করে দিতে হবে। এছাড়াও সকল পলিসি জনস্বার্থে বা বৃহত্তর স্বার্থে নেয়া প্রয়োজন। পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য গভর্মেন্ট বন্ড ইস্যু করা গেলে এক্ষেত্রে ব্যাংকিং সেক্টরে কম চাপ পড়বে। বিনিয়োগকারীরা যাতে বিভিন্ন প্রোডাক্ট ইস্যু করার ক্ষেত্রে এনবিআর থেকে কোন পলিসি সাপোর্ট দেয়া যায় তবে বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবে। এছাড়াও পুঁজিবাজারে ভাল কোম্পানি বৃদ্ধি করতে হবে একই সাথে নেগেটিভ ইক্যুইটি নিয়ে কাজ করতে হবে।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে