ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১

প্রথম পর্ব

বীচ হ্যাচারিতে কোটি কোটি টাকার ভূয়া সম্পদ

২০২৫ জানুয়ারি ০৯ ০৮:৫২:৫২
বীচ হ্যাচারিতে কোটি কোটি টাকার ভূয়া সম্পদ

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে থাকা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বীচ হ্যাচারির শেয়ার নিয়ে চলছে কারসাজি। যেখানে কৃত্রিম আর্থিক হিসাব দেখিয়ে সাধারন বিনিয়োগকারীদেরকে আকৃষ্ট করা হচ্ছে। এ কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে নিট মুনাফা অর্জনের খবর প্রকাশ করা হলেও, তার সত্যতা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। কারন তারা নানা ইস্যুতে কৃত্রিম আর্থিক হিসাব দেখিয়েছে।

কোম্পানিটির ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবে নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে এমন ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, সরকার বীচ হ্যাচারির ভবন ও হ্যাচারি ইক্যুপমেন্ট ভেঙ্গে ফেলার পরে আর্থিক হিসাবে ২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকার স্থায়ী সম্পদ দেখানো হয়েছে। তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওই সম্পদের বিপরীতে কোন রেজিস্টার ও বুকস অব অ্যাকাউন্টস নিরীক্ষককে দেয়নি। এমনকি ওই সম্পদের সঠিক বা প্রকৃত দর মূল্যায়নে ইমপেয়ারমেন্ট টেস্ট করেনি। যেখানে ব্যয় বৃদ্ধি ও সম্পদ কমে আসা স্বাভাবিক।

এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ৭ বছর ধরে গ্রাহকের কাছে ৩৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা পাওনা দেখিয়ে আসছে। যে অর্থ আদায় নিয়ে এরইমধ্যে শঙ্কা তৈরী হয়েছে। এই অবস্থায় ওই পাওনার বিপরীতে সঞ্চিত (প্রভিশনিং) গঠন বাধ্যতামূলক হলেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তা করেনি। এতে করে ব্যয় কম ও মোট সম্পদের পরিমাণ বেশি করে দেখানো হয়েছে। এছাড়া ওই পাওনা টাকার বিষয়ে নিরীক্ষক নিশ্চিত হতে গ্রাহকদের চিঠি দিতে চাইলেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তা করতে দেয়নি।

দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা হ্যাচারির ব্যবসায়ি এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মজুদ পণ্য দেখিয়েছে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকার। কিন্তু তারা নিরীক্ষককে এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি। এমনকি তাদের নিজেদের কাছে ইনভেন্টরি লেজার নেই। এছাড়া কোম্পানিটির কারখানায় সরেজমিনে গিয়ে পুকুর দেখলেও এতে কি পরিমাণ মাছ আছে, তা নির্ণয় করতে পারেনি নিরীক্ষক। এর বাহিরে অন্য কোন মজুদ পণ্য পায়নি নিরীক্ষক।

আরও পড়ুন....

এনআরবিসি ব্যাংক লুটেরাদের সহযোগী ছিলেন রাশেদ মাকসুদ : তদন্তে দুদক

এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে হাতে ও ব্যাংকে ৩ কোটি ৬৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা নগদ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। এরমধ্যে হাতে ৩ কোটি ৬৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকা এবং ব্যাংকে ২১ হাজার টাকা দেখিয়েছে। কিন্তু কোম্পানির নামে ৬টি ব্যাংক হিসার থাকলেও নিরীক্ষককে শুধুমাত্র অগ্রনি ব্যাংকের স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়েছে। এছাড়া হাতে নগদের সত্যতার বিষয়ে ক্যাশ বুকস দেয়নি। এমনকি সরেজমিনে গিয়ে কোন নগদ অর্থ পাওয়া পায়নি নিরীক্ষক।

এ কোম্পানিটিরও ঋণ রয়েছে। কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকার সিকিউরড ঋণ দেখানো হয়েছে। যা বছরের শুরুতে দেখায় ২ কোটি ১২ লাখ টাকা। তবে ব্যাংক স্টেটমেন্ট অনুযায়ি শুরুতে এ ঋণ ছিল ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অর্থবছরের শুরুর ঋণ নিয়ে এ ভিন্ন তথ্যের বিষয় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষককে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। যে ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়ে গেছে কোম্পানিটি।

এসব বিষয়ে শেয়ারাবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, অর্থবছর শেষে নিরীক্ষকের মতামতসহ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদন কমিশনে আসে। যা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যাচাই-বাছাই করে। এতে কোন অনিয়ম বা অসঙ্গতি পেলে, কমিশন আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

উল্লেখ্য, ২০০২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া বিচ হ্যাচারির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৪১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৬৫.০৩ শতাংশ। কোম্পানিটির মঙ্গলবার (০৫ ডিসেম্বর) শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৯০.৯০ টাকায়।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে