ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১

বীচ হ্যাচারিতে অতিরঞ্জিত আয়

২০২৫ জানুয়ারি ১২ ০৮:৫৭:১৫
বীচ হ্যাচারিতে অতিরঞ্জিত আয়

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে আরেক কারসাজির কোম্পানি বীচ হ্যাচারি। যে কোম্পানিটি দীর্ঘদিন পরে ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদনে এসেই ভূয়া আয় ও মুনাফা দেখিয়ে প্রতারণা শুরু করে সাধারন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে। যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের হিসাবেও বজায় ছিল। এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ভূয়া আয় দেখানোর সঙ্গে ব্যয়ের ক্ষেত্রেও মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। ফলে নিরীক্ষককে আয় ও ব্যয়ের কোন ব্যাখ্যা বা প্রমাণাদি দেখাতে পারেনি।

কোম্পানিটির ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

কক্সবাজারে অবস্থিত বীচ হ্যাচারির ভবন ও হ্যাচারি ইক্যুপমেন্ট মেরিন ড্রাইভ রোড নির্মাণের জন্য সরকার ভেঙ্গে ফেলেছিল। এছাড়া হ্যাচারি প্লান্ট গঠনের জন্য থাকা কিছু জমিও অধিগ্রহন করেছিল। যাতে করে ২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারি থেকে কোম্পানির পুরো বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে চিংড়ি ব্যবসায়ী এ কোম্পানিটি ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে ব্যবসায় ফিরেছে বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে রয়েছে প্রতারণার আশ্রয়।

বীচ হ্যাচারির আর্থিক হিসাবে ২২ কোটি ১ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি দেখানো হয়েছে। কিন্তু ব্যাংক হিসাবে পাওয়া গেছে মাত্র ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে পার্থক্য হওয়া ১৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা নগদে বিক্রি দেখিয়েছে বীচ হ্যাচারি কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে নিরীক্ষক।

কারন কারসাজি করার জন্য কোম্পানিগুলো নগদ লেনদেন দেখানো অন্যতম হাতিয়ার। এতে করে তারা আয়-ব্যয়ের সঠিক তথ্য লুকাতে পারে। কারসাজির জন্য অতিরঞ্জিত আয় এবং ব্যয় কম দেখিয়ে নিট মুনাফা বেশি দেখিয়ে থাকে। যা বীচ হ্যাচারিতে হয়েছে বলে নিরীক্ষকের ধারনা।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, কৃত্রিম আর্থিক হিসাব দেখানো নতুন কিছু না। এর পেছনে প্রধান কারন হিসেবে রয়েছে শাস্তির আওতায় না আসা। বীচ হ্যাচারির ক্ষেত্রেও হয়তো আমরা সেটাই দেখতে পাবো।

তিনি বলেন, সাধারনত নিরীক্ষকরা কৃত্রিম আর্থিক হিসাব দেখাতে কোম্পানিগুলোকে সহযোগিতা করেন। সেখানে বীচ হ্যাচারি নিয়ে নিরীক্ষক যে তথ্য তুলে ধরেছেন, তাহলে কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা যে আরও কত ভয়াবহ, তা অকল্পনীয়। এমন একটি কোম্পানিকে কিন্তু শাস্তির আওতায় আনতে কোন পরিশ্রম করতে হবে না। নিরীক্ষকের তথ্যই শাস্তি দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

আরও পড়ুন.....

বীচ হ্যাচারিতে কোটি কোটি টাকার ভূয়া সম্পদ

এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে ব্যয়জনিত দায় দেখিয়েছে ৯৫ লাখ টাকা। কিন্তু তারা অ্যাকাউন্টস সঠিকভাবে করেনি এবং ওই দায়ের স্বপক্ষে কোন প্রমাণাদি দেখাতে পারেনি। ফলে ওই দায়ের সত্যতা যাচাই করা যায়নি।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, বীচ হ্যাচারিতে ২০ লাখ টাকার অবন্টিত লভ্যাংশ রয়েছে। যা দীর্ঘদিন ধরে হিসাবে দেখানো হচ্ছে। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সঠিক অ্যাকাউন্টস রক্ষণাবেক্ষন করে না।

এই কোম্পানির কাছে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা দাবি করে চিঠি দিয়েছে আয়কর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওই দাবি পরিশোধে পর্যাপ্ত প্রভিশনিং করেনি।

এদিকে বীচ হ্যাচারি কর্তৃপক্ষ আইএএস-১২ এর ৫৮ অনুযায়ি, ডেফার্ড ট্যাক্স গণনা করেনি। এছাড়া আইএএস-২৪ এর ১৭ অনুযায়ি রিলেটেড পার্টি ডিসক্লোজারস দেয়নি।

এসব বিষয়ে শেয়ারাবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, অর্থবছর শেষে নিরীক্ষকের মতামতসহ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদন কমিশনে আসে। যা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যাচাই-বাছাই করে। এতে কোন অনিয়ম বা অসঙ্গতি পেলে, কমিশন আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

উল্লেখ্য, ২০০২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া বিচ হ্যাচারির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৪১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৬৫.০৩ শতাংশ। কোম্পানিটির শনিবার (১১ ডিসেম্বর) শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৯২.৮০ টাকায়।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে