ঢাকা, বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ৮ মাঘ ১৪৩১

ভূয়া সম্পদ দেখানোসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক

২০২৫ জানুয়ারি ২২ ০৯:৩০:১৩
ভূয়া সম্পদ দেখানোসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত স্ট্যান্ডার্ন্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের আর্থিক সংকটে গত বছরের শুরুতেই উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এটা অবশ্য সরকার বকেয়া বিল না পেয়ে বিদ্যুত ও গ্যাস লাইন বিচ্যুতি করে দেওয়ায় বন্ধ করতে হয়েছে। তবে উৎপাদনে থাকলেও কোম্পানিটির বিক্রির চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছিল। তাই লোকসান অবধারিতই ছিল। এরমধ্যেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে ভূয়া মজুদ পণ্য দেখানোসহ নানা অনিয়ম করেছে। যার প্রথম পর্ব আজ তুলে ধরা হল।

স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় নিরীক্ষক জানিয়েছেন, কোম্পানিটির গত ৩০ জুন চলতি দায়ের পরিমাণ ছিল ৪৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এরমধ্যে ব্যাংক ঋণ ২০ কোটি ২৭ লাখ টাকা। অথচ কোম্পানিটির ৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকার মজুদ পণ্যসহ মোট চলতি সম্পদের পরিমাণ মাত্র ১১ কোটি টাকা। যা কোম্পানিটির আর্থিক অস্বচ্ছলতাকে তুলে ধরেছে। এরইমধ্যে কোম্পানিটি চলতি দায় পরিশোধে অক্ষম হয়ে গেছে। যা কোম্পানিটির সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছে।

স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের গত ৩০ জুন সংরক্ষিত আয় (রিটেইন আর্নিংস) দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৩৫ কোটি টাকা। এতে করে কোম্পানিটির নিট সম্পদ ঋণাত্মক হয়ে গেছে ২৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এছাড়া কোম্পানিটির ৯ কোটি ৭ লাখ টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। যা নিয়ে সমঝোতা বা অন্যকোন উপায়ে ঋণ পরিশোধেরও সক্ষমতা নেই।

এ কোম্পানিটির কারখানা ২০২৪ সালের ২৬ জানুয়ারি বন্ধ হয়ে গেছে। বকেয়া বিল না দেওয়া কোম্পানিটির কারখানা থেকে বিদ্যুত ও গ্যাস লাইন বিচ্যুতি করার কারনে কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে বিদ্যুত, গ্যাস ও কাঁচামালের দর বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদনে থাকাকালীন সময়ই কোম্পানিটির বিক্রি মূল্য থেকে ব্যয় বেশি হচ্ছিল। এতে করে আগের অর্থবছরের ২৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নেমে আসে ৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকায়। এতে করে কোম্পানিটির ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নিট লোকসান হয়েছে ১৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে ৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকার মজুদ পণ্য দেখিয়েছে। এরমধ্যে ৭ কোটি ৮১ লাখ টাকার বা ১০৬১ মেট্রিক টন মজুদ পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ছিল (ওয়ার্ক ইন প্রসেস) বলে দেখিয়েছে। যে কোম্পানিটি ৭ মাসে (২০২৪ সালের ২৪ জুন বন্ধের আগে) উৎপাদন করেছিল ৯২৫ মেট্রিক টন। অথচ তারা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ৮ মাসের বেশি পণ্য ওয়ার্ক ইন প্রসেস হিসেবে দেখিয়েছে।

আরও পড়ুন...

লোকসানকে মুনাফা দেখিয়েছে মুন্নু সিরামিক

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, যদি ধরি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় (বিক্রিযোগ্য হয়নি) ১৫ দিনের কাঁচামাল ছিল। তাহলে কোম্পানিটির উৎপাদন সক্ষমতা অনুযায়ি সর্বোচ্চ ৬৫ থেকে ৭০ মেট্রিক টন পণ্য ওখানে ছিল। যার মূল্য ৫২ লাখ টাকা। তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ৭ কোটি ২৯ লাখ টাকার মজুদ পণ্য বেশি দেখিয়েছে। এর মাধ্যমে সমপরিমাণ নিট লোকসান ও ঋণাত্ম সম্পদ কম দেখানো হয়েছে।

এমনকি ওই ভূয়া মজুদ পণ্যের বিষয়ে নিরীক্ষককে কোন রেজিস্টার বা সরেজমিনে সত্যতা যাচাইয়ের সুযোগ দেয়নি স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৭১.৭৬ শতাংশ। কোম্পানিটির মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৬৫.৫০ টাকায়।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে