ঢাকা, বুধবার, ২ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১

বিএসইসিকে পরাধীন করার পাঁয়তারা : হারাতে পারে আইওএসকো’র সদস্যপদ

২০২৫ মার্চ ২০ ০৯:৪৭:৪০
বিএসইসিকে পরাধীন করার পাঁয়তারা : হারাতে পারে আইওএসকো’র সদস্যপদ

ইব্রাহিম হোসাইন (রেজোয়ান) : শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশনে (বিএসইসি) যোগদানের পর থেকে যোগ্যতার সাক্ষর রাখতে পারেনি খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন। স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে নিজেদেরকে অযোগ্য বলে প্রমাণ করেছেন। এবার তারা বিএসইসির নিজস্ব স্বকীয়তা নষ্ট করার পাঁয়তারা শুরু করেছেন। যে বিএসইসি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, সেটাকে পরাধীন করার উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান কমিশন। যা বাস্তবায়নে বিএসইসি বিশ্বের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর বৈশ্বিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসকো) সদস্যপদ হারাতে পারে। তাই খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের বিএসইসিকে পরাধীন করার উদ্যোগকে কোনভাবেই সমর্থন যোগ্য বলে মনে করেন না বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এশিয়ান ডেভেলোপমেন্ট ব্যাংকের সুপারিশে ১৯৯৩ সালে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান শেয়ারবাজারের স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রতিষ্ঠা করেন। তবে ওইসময় শুরুতে মন্ত্রণালয়ের লোকজন দিয়ে বিএসইসি পরিচালনা করা হতো। পরবর্তীতে এডিবির সুপারিশে বিএসইসিতে নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে মন্ত্রণালয়ের সবাইকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এরমধ্য দিয়ে বিএসইসি একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠে।

এই স্বাধীন প্রতিষ্ঠানটিকে আবারও দুই যুগের বেশি সময় পরে এসে সেই মন্ত্রণালয়ের লোকজন দিয়ে পরিচালনা করার উদ্যোগ নিয়েছে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন। যা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিএসইসি যে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান, সেটি হারিয়ে ফেলবে।

অথচ শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর বৈশ্বিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসকো) প্রিন্সিপালের অন্যতম একটি বিষয় হচ্ছে- শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে হতে হবে স্বাধীন। এই স্বাধীনতা অর্জনসহ অন্যান্য শর্ত পরিপালনের মধ্য দিয়ে ১৯৯৫ সালে আইওএসকোর সদস্যপদ ও ২০১৩ সালে সংগঠরটির ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নিত হয়েছিল বিএসইসি। যদি সেটাই আবার হারিয়ে ফেলে, তাহলে আইওএসকোতে নিম্নমান, এমনকি সদস্যপদ হারানোর শঙ্কা তৈরী হবে। এতে দেশি ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ডিএসই এর পরিচালক মনে করেন ।

সম্প্রতী আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে দেওয়া বিএসইসির এক চিঠিতে বলা হয়, কমিশনের কাজে গতি আনতে প্রেষণে জরুরি ভিত্তিতে ১৯ কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই ১৯ কর্মকর্তার মধ্যে ৩ জন কমিশনের নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার, ৩ জন পরিচালক পদমর্যাদার, ১ জন কমিশন সচিব ও ১২ জন যুগ্ম বা অতিরিক্ত পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা চাওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে বিএসইসিতে কর্মকর্তা আনার সিদ্ধান্তকে সঠিক মনে করি না। এটি বাস্তবায়নে বিএসইসির স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হবে ও নিজস্ব স্বকীয়তা হারাবে। কোনভাবেই বিএসইসির মন্ত্রণালয় থেকে লোকজন আনার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করা যায় না।

স্টক ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এর সভাপতি সাইফুল ইসলাম অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, সারাবিশ্বে বিএসইসি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষায়িত এবং স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। এখন আমাদের বিএসইসি যদি স্বেচ্ছায় স্বাধীনতা হারাতে চায়, তাহলে বিএসইসিরই উচিত ব্যাখ্যা দেওয়া। একইসঙ্গে বিএসইসির বিষয়টির আরেকবার ভাবা উচিত। এছাড়া সরকারেরও উচিত হবে এমন একটি কাজ করার আগে ভালোভাবে মূল্যায়ন করা।

ডিএসইর সাবেক এক পরিচালক অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, বিএসইসিতে যা হচ্ছে, তা অনেকটা সার্কাসের মতো। এটাকে এখন আর রেগুলেটর মনে হয় না। গত ৫ মার্চ বিএসইসির চেয়ারম্যান-কমিশনারদের পদত্যাগে কর্মকর্তা-কর্মকর্মচারীদের মধ্যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে গেছে। এছাড়া এই কমিশনের ব্যর্থতা ও অযোগ্যতা শেয়ারবাজারের এমন কেউ নাই, যারা জানে না। এমন একটি নেতৃত্ব বিএসইসিকে পরাধীনের মতো সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। তাদের কাছে এরচেয়ে আর কি আশা করা যায়। তবে তাদের এই সিদ্ধান্ত যদি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার অনেক পিছিয়ে পড়বে। এছাড়া স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা নষ্ট হওয়ার মধ্য দিয়ে আইওএসকো’র সদস্যপদ হারাতে পারে বিএসইসি।

সিনিয়র বিনিয়োগকারী জুবায়ের হোসেন অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, বিএসইসি একটি অত্যান্ত সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠান। এটি নিজস্ব আইন দ্ধারা গঠিত এবং স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। অথচ এ সর্ম্পক্যে অবহিত নন বিএসইসির চেয়ারম্যান-কমিশনাররা। সবাই যেখানে স্বাধীন থাকতে চায়, সেখানে রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন স্বেচ্ছায় পরাধীনতা বরন করতে চায়। অনেকটা নিজেদের মাথা স্বেচ্ছায় ছুরির নিচে দেওয়ার মতো।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর