ঢাকা, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩১

মিয়া মামুনের ভয়াবহ প্রতারণা : ধংসের পথে ফু ওয়াং ফুড

২০২৫ এপ্রিল ১০ ০৯:৩০:৫৬
মিয়া মামুনের ভয়াবহ প্রতারণা : ধংসের পথে ফু ওয়াং ফুড

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারের এক অভিনব প্রতারক মিয়া মামুন। যিনি জাপানি কোম্পানির নামে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে শেয়ারবাজারে সেকেন্ডারি মার্কেটে আরেক আবুল খায়ের হিরু হওয়ার পথে ছিলেন। যে শেয়ারবাজারে এমারেল্ড অয়েল ও ফু-ওয়াং ফুডসের মালিকানা নিয়ে পর্ষদে ঢুকে প্রতারণার ফাঁদ তৈরী করেন। পরে সেকেন্ডারি মার্কেটের বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির পাশাপাশি কোম্পানিই ধংস করে দেন।

তার এ কর্মকান্ডে ধংসের পথে থাকা ফু-ওয়াং ফুডসকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) অভিযোগ করেছেন বিনিয়োগকারীরা।

মিয়া মামুন ২০২৩ সালের জানুয়ারী মাস থেকে ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বিজনেস প্রমোশন খাত দেখিয়ে, জালিয়াতি করে প্রতিমাসে ফু-ওয়াং ফুডস থেকে অবৈধভাবে ৩ লক্ষ টাকা করে মোট ৪৫ লক্ষ টাকা জোর খাটিয়ে বাড়ী ভাড়া নিয়ে গেছেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালীন তিনি বেতন হিসেবে যে প্রতিমাসে ৬ লক্ষ টাকা নিয়েছেন, তার ভেতরে বাড়ী ভাড়া অন্তর্ভুক্ত ছিল। সুতরাং আলাদা করে বাড়ী ভাড়া নেয়ার অধিকার তার নেই এবং বাড়ী ভাড়া খাত না দেখিয়ে অন্য খাত দেখিয়েছেন। আর তিনি যখন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন না, শুধুমাত্র পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন, ঐ সময়ে তিনি কোন ভাতা পাওয়ার অধিকারী নন।

এই মিয়া মামুন গত বছরের ২ জুন মিয়া মামুন কোম্পানীর লেটারহেড প্যাডে একটি অফিস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে গাজীপুর ও টাঙ্গাইল ব্যতীত সংশ্লিষ্ট সকলকে হিসাব গতিশীল করার লক্ষ্যে কোম্পানীর বিক্রয়ের সমুদয় টাকা মোবাইল ব্যাকিং এজেন্ট একাউন্টে জমা দিতে হবে, কোন টাকা ব্যাংকে প্রদান করা যাবে না। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয় মোবাইল ব্যাংকিং চার্জ (বিকাশ ও নগদ) কোম্পানী বহন করবে। একই দিনে পৃথক একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষরহীন বিজ্ঞপ্তিতে একই রকম নির্দেশনা দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা পাঠানোর জন্য একটি এজেন্ট ফোন নাম্বার ০১৭৫৮- ৩৮৬২২২ (বিকাশ ও নগদ-এজেন্ট) দেয়া হয়। মূলত অর্থ আত্মসাতের জন্যই এমনটি সাজানো হয়।

মিয়া মামুনের নিয়ন্ত্রনে থাকা এমারল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড একটি বন্ধ কোম্পানী। কোম্পানীর অডিটকৃত আর্থিক বিবরনী অনুযায়ী এটি একটি দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ার। তারপরেও মিয়া মামুন ফু-ওয়াং ফুডসের শ্রমিক-কর্মচারীদের দীর্ঘ চাকুরী জীবনে সঞ্চিত প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকায় ঐ শেয়ার ক্রয় করে।

অর্থ আত্মসাৎ ও ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেড কোম্পানী থেকে নানারকম অবৈধ ও অনৈতিক সুবিধা নেয়ার জন্য মিয়া মামুন মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেড এর অধীনে আরও কয়েকটি নাম-সর্বস্ব কোম্পানী খোলেন এবং ঐসব কোম্পানীর লোকবলকে বিনা ভাড়ায় ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেড কোম্পানীর অফিস-স্পেস ও গাড়ীসহ অন্যান্য সুবিধা দেন এবং এখনও দিয়ে আসছেন। কোম্পানী গুলো হল (1) WELL MARRYJAPAN LTD, (2) NOAH JAPAN LTD, (3) SENNOHA JAPAN CO. LTD, (4) MARINOS CORPORATION JAPAN LTD, (5) UNIC PRINTING CO. LTD (6) AGURA LOGISTIC CO. LTD (7) AGORA JAPAN LTD.

আরও পড়ুন......

ফু ওয়াং ফুডস মিয়া মামুনের আত্মসাতের কারখানা

মিয়া মামুন ২০২৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কোম্পানীর পরিচালনা পর্ষদের সভায় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরে দাড়ানোর জন্য পদত্যাগপত্র জমা দেন। যা ২১ সেপ্টেম্বর গ্রহন ও কার্যকর হয়। কিন্তু এরপর রফিকুল হাসান খানকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার পরেও মিয়া মামুন অবৈধ খরচগুলোকে অনুমোদন দিতে বলে। যা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মিয়া মামুন ও তার অনুগত পরিচালক ও কর্মকর্তাগন কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে রফিকুল হাসান খানকে অপসারণ করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত হন।

এই মিয়া মামুন কোম্পানীর মাত্র ৭.৬১ শতাংশ শেয়ার ধারন করলেও পরিচালনা পর্ষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিচালকগন তার প্রস্তাবের পক্ষে। এ কারনে মিয়া মামনু ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সরে দাড়ানোর জন্য তিনি নিজে ও লোকমারফত প্রস্তাব ও পরে চাপ প্রয়োগ করেন। এরই প্রেক্ষিতে তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে অফিসের ভেতর নানারকম হয়রানিমূলক ও অসম্মানজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে, বিরূপ পরিস্থিতিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ১৬ এপ্রিল পদত্যাগপত্র জমা দিতে বাধ্য হন।

মিয়া মামুনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হওয়ার জন্য তাড়াহুড়া ছিল, সে কারনে তিনি রফিকুল হাসানকে পদত্যাগের জন্য নোটিশ পিরিয়ড (৩০ দিন) পর্যন্ত সময় দেননি এবং পরিচালনা পর্ষদও নোটিশ পিরিয়ড ছাড়াই প্রস্তাবিত অব্যাহতির দিন থেকেই তার পদত্যাগপত্র কার্যকর করেন।

মিনোরি বাংলাদেশ এর মনোনীত পরিচালকরা, বিশেষ করে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিয়া মামুন তার ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মত্মসাৎ ধামাচাপা দিতে, কোম্পানীর আর্থিক লেনদেনের প্রকৃত তথ্য গোপন করে। তার নেতৃত্বে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সম্পূর্ণ বানোয়াট আর্থিক হিসাব বিবরণী প্রস্তুত করে কোম্পানীর ৯২.১৫% সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের সাথে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন।

মিয়া মামুন একটি প্রতারণা মামলায় আটক হয়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় এবং পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ২০২৪ সালের ২৩ জুন থেকে প্রায় ৫ মাস সময় ধরে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই শূণ্য থাকা অবস্থায়, কোম্পানীর আর্থিক বিবরনীর চূড়ান্ত ড্রাফট তৈরী না করেই ২০২৪ সালের ২০ অক্টবর ঘোষনা দিয়ে ২৮ অক্টবর ২০২৪ তারিখে পরিচালনা পর্ষদের সভা আহ্বান করা হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী কোম্পানীর আর্থিক বিবরণীর চূড়ান্ত ড্রাফট অডিটর প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তৈরী না হওয়া পর্যন্ত কোন কোম্পানী, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ(লিস্টিং) রেগুলেশনস ১৯(১) ধারায় কোন বোর্ড মিটিং আহহ্বান করতে পারে না।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেড দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী স্বনামধন্য বেকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানে প্রায় এক হাজারের অধিক শ্রমিক কর্মচারী কাজ করে এবং পরিবেশক পর্যায়ে আরও প্রায় পাচশত ব্যবসায়ী, তাদের কর্মচারীদের জীবিকা নির্বাহ হয়। এ অবস্থায় কোম্পানিটিতে বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও পরিচালনা পর্ষদের অব্যাহত দুর্নীতি, অর্থ-আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও জাল-জালিয়াতির কারনে বন্ধ হতে বসা কোম্পানীর সাধারণ শেয়ারহোল্ডার, অসহায় শ্রমিক-কর্মচারী, ক্ষতিগ্রন্থ সরবারহকারী সহ সকল স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষার্থে, দুর্নীতির তদন্ত করে কোম্পানীর পরিচালনা পর্যদ ভেঙে দিয়ে প্রশাসক/রিসিভার নিয়োগ করে রাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ হওয়ার হাত থেকে বাচাতে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে আবেদন করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে