ঢাকা, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩১

মশিউর সিকিউরিটিজের প্রতারণায় নিঃস্ব ফারহানা জাফরিন

২০২৫ এপ্রিল ১০ ১৪:২৭:১৩
মশিউর সিকিউরিটিজের প্রতারণায় নিঃস্ব ফারহানা জাফরিন

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেক হোল্ডার মশিউর সিকিউরিটিজ লিমিটেডের আত্মসাতের ফাঁদে পড়ে ২৫ বছরের জমানো পুঁজি হারিয়েছেন বিনিয়োগকারী ফারহানা জাফরিন। তিনি মশিউর সিকিউরিটিজে ১ কোটি টাকা দিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন। যার কোন টাকাই ফিরত পাননি।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে মশিউর সিকিউরিটিজের নিঃস্ব বিনিয়োগকারীরা সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব অভিযোগ করেন।

ফারহানা জাফরিন বলেন, আমি চাকরি জীবনের সব জমানো পুঁজি মশিউর সিকিউরিটিজে রেখে আজ নিঃস্ব। আমি একটি টাকাও ফেরত পাইনি। একথা বলে সংবাদ সম্মেলনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

আবু মাসুদ নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, আমি ৩৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। আমাদের পোর্টফলিও এক রকম দেখাতো আর তাদের অন্য সার্ভারে আরেক রকম হিসাব রাখতো যার কারণে আমরা সঠিক তথ্য পেতাম না। তারা আমাদের নাম্বারের জায়গায় তাদের নিজেদের নাম্বার দিয়ে সিডিবিএলে পাঠিয়েছেন যার কারণে আমরা সিডিবিএল থেকে কোন তথ্য পেতাম না।

শাহজাহান আলী তিনি মশিউর সিকিউরিটিজে ৪০ লাখ ১৫ হাজার ৯০০ টাকার চেক দিয়েছে। কিন্তু টাকা তুলতে গিয়ে চেক ডিজ ওনার হয়। যার ফলে আমরা আর টাকা পাইনি। মশিউর সিকিউরিটিজের প্রতারণার জন্য আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্যে বিনিয়োগকারীরা বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্থ বিনিয়োগকারীগণ এখানে সমবেত হয়েছি মশিউর চিকিউরিটিজ (ডিএসই মেম্বার ১৩৪) এর দুর্নীতির বিষয়ে আপনাদের অবহিত করতে। প্রতিষ্ঠানটি যেভাবে গ্রাহকে ধোকা দিয়েছে তা আমরা এখন পেশ করব।

মশিউর সিকিউরিটিজের অর্থ আত্মসাৎ এর উদ্দেশ্যে ক্লায়েন্টের শেয়ার বিক্রি করে এবং ব্যাক সফটওয়্যার ব্যবহার করে ক্লায়েন্টের মেইলে জাল পোর্টফলিও পাঠায়, যা মূল পোর্টফোলিওর অনুরূপ। যাতে করে গ্রাহক বুঝতে না পারে তার পোর্টফোলিও তে থাকা শেয়ার বিক্রি হয়েছে এবং পরবর্তীতে বিএংলা টাকা আত্মসাৎ করে।

আমরা জানি শেয়ার বিক্রি কিংবা ক্রয় করলে সিডিবিএল হতে কনফার্মেশন মেসেজ আসে এক্ষেত্রে গ্রাহকের মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে নিজেদের মোবাইল নম্বর চালিয়ে দেয় মশিউর সিভিয়ারীও হাতে করে গ্রাহক বিক্রয়ের মেসেজ না পায় এভাবে প্রতিষ্ঠানটি জালিয়াতির আশ্রয় নেয়।

এছাড়াও রেকর্ড ডেইট এর আগে বেশী দামে যে পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করে রেকর্ড ডেইটের পর সেই পরিমাণ শেয়ার কিনে রেখে দিত যাতে বিনিয়োগকারী বুঝতে না পারে। ফলে বিনিয়োগকারী লভ্যাংশ পেত না এবং বিক্রনা ও ক্রয়ের মূল্য পার্থক্যের টাকা হিসাব থেকে সরিয়ে নিত। নিরব দীর্ঘমেয়াদী প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সাথে সে এহেন প্রতারণার কাজ করেছে। অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহকের পোর্টফোলিয়তে রক্ষিত ক্যাশ টাকা গ্রাহককে ফেরত না দিয়ে নিজেরা আত্মসাৎ করে।

বিষয়টি জানাজানি হলে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর শেখ মোগলজান রহমান মিঠু বিভিন্ন সময়ে চেক ইস্যু করে, আজ অবধি একটি চেকও পাস হয়নি এবং কিছু কিছু চেকের মেয়াদ পার হয়ে গিয়েছে। গত ১৯.০২.২০২৫ তারিখে তিনি বিনিয়োগকারীদের টাকা বাপে ধাপে পরিশোধ করবেন বলে অঙ্গীকার করেন কিন্তু আয়ও পর্যন্ত তিনি একটি টাকাও পরিশোধ করেনি এবং কালক্ষেপণ করতেছে।

বিষয়াটি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কে জানানো হলে তারা তদন্তের নামে কালক্ষেপণ করে। এবং এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। হাতামধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেজ কমিশনকে এ বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। ব্যাংকের অন্যরককারী হলো বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বি.এস.ই.সি ব্রোকারদের তদারককারী বা রেগুলেটর হলেও বিনিয়োগকারীদের অনেক লিখিত মৌখিক অভিযোগ সত্ত্বেও উক্ত রেগুলেটর বিনিয়োগকারীদের অর্থ আদায়ে কোনরকম পদক্ষেপ এখনো পর্যন্ত নেয়নি। তাদের এই বিমাতাসুলভ আচরণের আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই সমস্যায় অসু সমাধান আশা করি। আজ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঁজি বিনিয়োগকারীরা সব হারিয়ে চরম অশান্তি কষ্টে দিন পার করছে। ইতোমধ্যে অনেক বিনিয়োগকারি কষ্টে এবং টাকার অভাবে মারা গিয়েছেন।

মানুষের সারা জীবনের সঞ্চয় মশিউর সিকিউরিটি নিয়ন্ত্রণ সংস্থার নাকের ডগা দিয়ে নিয়ে যাবে যা দুঃখজনক এবং স্পর্শকাতর। নিয়ন্ত্রন সংস্থা বিনিয়োগকারীদের অর্থের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যার্থ।

নিয়ন্ত্রণ সংস্থার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সহায়তায় মশিউর সিকিউরিটিজ এ ধরনের কাজ করেছে। এই ঘটনায় সরাসরি জড়িত শেখ মোগল যান রহমান (মিঠু), ডাইরেকীর জিয়াউল হাসান চিসতি (মামুন), বিপুল, টুটুল (আইটি) জিএম, তিনি জাল পোর্টপোলিও পাঠাতো বর্তমানে পলাতক।

দীর্ঘদিন গ্রাহকের অর্থ ও শেয়ারের প্রকৃত তথ্য প্রতিষ্ঠানটি আড়াল করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ১৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। অবৈধভাবে অর্জিত টাকা বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্ট, (Hotel Graver Inn. Kuakata), এগ্রো বিজনেস (Mazim Agro Ltd) টেক্সটাইল মেশিনারি (Mazim Trading Corporation) ইত্যাদি ব্যবসায় বিনিয়োগ, অর্থ পাচার, ও বিলাসী জীবন যাপনে বায় করে।

আমরা সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়, অর্থ উপদেষ্টা মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের মনযোগ আকর্ষণ করছি এহেন প্রতিষ্ঠিত প্রতারকের হাত থেকে আমাদের অর্থ উদ্ধারে সহযোগিতা চাই এবং প্রতারকের দৃষ্টান্ত মূলক শান্তি চাই। সেই সাথে বি এস ই সি ও ডি এস ই এর দুরনীর্তিবাজ কর্মকর্তা দৃষ্টান্ত মূলক শান্তি কামনা করি।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে