ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

বিএসইসির শেয়ারবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপে আ.লীগের আশিক

২০২৫ এপ্রিল ১৫ ২৩:২৭:৫৮
বিএসইসির শেয়ারবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপে আ.লীগের আশিক

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগকে বিতারিত করা হলেও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। যে কারনে এখনো বিএসইসি আওয়ামীলীগের বিতর্কিত লোকজনকে নিয়ে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছে। এ তালিকায় আওয়ামী হিসেবে সুপরিচিত মিডওয়ে সিকিউরিটিজের প্রয়াত কর্ণধার রকিবুর রহমানের ছেলে মো. আশিকুর রহমানকে পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপে যুক্ত করা হয়েছে। যার বিরুদ্ধে টাস্ক ফোর্সে অভিযোগ করেছেন ব্রোকার কমিউনিটির কেউ কেউ।

পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো এবং আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ গঠন করা হয়েছে। এ গ্রুপে ১০ জন সদস্য আছেন। এদের একজন মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি মো. আশিকুর রহমান।

এই ফোকাস গ্রুপ এরইমধ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবসহ (আইপিও) কয়েকটি বিষয়ে মতামত টাস্ক ফোর্সের মাধ্যমে বিএসইসিতে জমা দিয়েছে। অথচ এই গ্রুপে আইপিও নিয়ে কাজ করা কোন মার্চেন্ট ব্যাংকার নেই। যাতে আইপিও নিয়ে সত্যিকার অর্থে বাস্তবিক কোন সংস্কার হবে বলে মার্চেন্ট ব্যাংকাররা মনে করছেন না।

আশিকুর রহমানের পিতা শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রয়াত রকিবুর রহমান। প্রয়াত এই রকিবুর রহমান আওয়ামীলীগার হিসেবে সুপরিচিত। যিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগযোগসহ আওয়ামীলীগার হিসেবে নিজেকে পরিচিত দিতেন। যার সুবিধাভোগী আশিকুর রহমান। তবে তিনি ৫ আগস্টের পরে ভোল পাল্টে আওয়ামীলীগের বিষাদগারের বিষয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করেছেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামীলীগকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানো হলেও তার পেতাত্মারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে কাজ করে যাচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন জায়গায় তাদের লোকজনকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে ডিএসইর সিনিয়র এক ব্রোকার অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, রকিবুর রহমান আমৃত্যু শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের সভাপতি ছিলেন। তিনি সবসময় আওয়ামীলীগের প্রভাব খাটিয়েছেন ডিএসইতে। এছাড়া শেয়ারবাজারে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারীর হোতা। যার বিরুদ্ধে সচেতন থাকার জন্য সরকারকে ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বাধীন তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছিল। এখন সেই রকিবুর রহমানের ছেলেকে নিয়ে কাজ করছে বিএসইসির টাস্ক ফোর্স। যাদেরকে আশিকের বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছিল। তারপরেও টাস্ক ফোর্স বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি।

ডিএসইর আরেক সিনিয়র ব্রোকার অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, রকিবুর রহমান সবসময় আওয়ামীলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে ডিএসইতে প্রভাব খাটিয়েছেন। তিনি প্রভাব খাটিয়ে কম দামে ট্রেক ইস্যু, পঁচা কোম্পানির আইপিও আনা, ডিএসই ভবনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার কারনেই দেশে স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন করতে হয়েছে। এখন তার ছেলেকে দিয়ে ফোকাস গ্রুপ করেছে টাস্ক ফোর্স। এটা কোনভাবেই আমাদের বোধগম্য না। দেশে কি এতোই লোকজনের অভাব পড়েছে। আসলে শেষে গিয়ে এসব গ্রুপ, টাস্ক ফোর্স দিয়ে শেয়ারবাজারের কিছুই হবে না।

কয়েকজন মার্চেন্ট ব্যাংকার অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, শেয়ারবাজারে আইপিও নিয়ে কাজ করি আমরা। আমরাই সবচেয়ে ভালো জানি আইপিওতে কোথায় সমস্যা। অথচ আমাদেরকে বাদ দিয়ে আইপিও রুলস পরিবর্তনের কাজ করা হয়েছে। ১০ জনের এতো বড় ফোকাস গ্রুপে একজনও মার্চেন্ট ব্যাংকার নেই। অথচ শেয়ারবাজারের কিছুই বুঝে না, এমন ব্যক্তি ওই তালিকায় রয়েছে। তাই আইপিও রুলস আবারও পরিবর্তনের দরকার পড়বে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ফোকাস গ্রুপের দুইজন সদস্য এ কাজে আগ্রহ প্রকাশ না করায় নতুন সদস্য নিয়োগ দিয়ে ফোকাস গ্রুপ পুনর্গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নতুন দুই সদস্য হলেন—ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সহকারী মহাব্যবস্থাপক (লিস্টিং ডিপার্টমেন্ট হেড) মো. রবিউল ইসলাম এবং ইডিজিই এএমসি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও সিএফএ সোসাইটি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মো. আসিফ খান।

পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের অন্য সদস্যরা হলেন—প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এবং সিইও মো. মনিরুজ্জামান, মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি মো. আশিকুর রহমান, এ কে খান সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিয়া, ক্যাল বাংলাদেশের এমডি ও কান্ট্রি হেড অ্যান্ড্রু দেশন পুষ্পরাজাহ, সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) জিএম ও সিটিও (ভারপ্রাপ্ত) এম ইমাম হোসেন, আহমেদ শেখ রায় অ্যান্ড কোং-এর পার্টনার শেখ তারেক জহির, আহমেদ হক সিদ্দিকী অ্যান্ড কোং-এর ম্যানেজিং পার্টনার মো. ওয়াদুদ আহমেদ এবং আইসিএবির সদস্য দীপক কুমার রায়।

এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মানের পুঁজিবাজারের সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স কর্তৃক ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ গঠন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ফোকাস গ্রুপ পুনর্গঠনের বিষয়ে বিএসইসির সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়েছে, পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সুপারিশের ভিত্তিতে মো. শহিদুল ইসলামের স্থলে মো. রবিউল ইসলাম এবং আলী ইমামের স্থলে মো. আসিফ খানকে ফোকাস গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়া, পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের সদস্যদের সম্মানি হিসাবে সভায় উপস্থিতির ভিত্তিতে প্রত্যেক সদস্যকে সভাপ্রতি ৮ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

এর আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ স্বাক্ষরিত আদেশে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়। টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং-এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা আকবর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন।

ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়, টাস্কফোর্সের অধীনে বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক ফোকাস গ্রুপ থাকবে। প্রতিটি ফোকাস গ্রুপ নির্দিষ্ট বিষয়ে কাজ করবে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে টাস্কফোর্সকে সুপারিশ করবে।

কমিশনকে অবহিত করে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ উপযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ গঠন করবে।

পাঠকের মতামত:

অন্যান্য এর সর্বশেষ খবর

অন্যান্য - এর সব খবর



রে