ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

শেয়ারবাজারের সমস্যা সমাধানের কর্ম পরিকল্পনা দাখিলের নির্দেশ

২০২৫ এপ্রিল ১৬ ২২:১১:০৭
শেয়ারবাজারের সমস্যা সমাধানের কর্ম পরিকল্পনা দাখিলের নির্দেশ

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজার নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। দীর্ঘদিন ধরে টেনে নিয়ে বেড়ানো এসব সমস্যা এখন পুঁজিবাজারের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না বাজার। তাই পুঁজিবাজারের সকল সমস্যা দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী।

সভায় অংশীজনরা তাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরেছেন। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে এবং তা সমাধানের বিষয়গুলো একটি অ্যাকশন প্ল্যান (কর্ম পরিকল্পনা) তৈরি করে আগামী ১৫ মে’র মধ্যে পুঁজিবাজার উন্নয়ন কমিটির কাছে জমা দিতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনের মাল্টিপারপাস হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির উদ্যোগে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট ১০ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখ এবং পুঁজিবাজার উন্নয়ন কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকুল ইসলাম, কমিটির সদস্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বিমা ও পুঁজিবাজার অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাঈদ কুতুব সভায় উপস্থিত ছিলেন।

মতবিনিময় সভায় পুঁজিবাজারের সমস্যগুলোর মধ্যে- চলমান নেগেটিভ ইক্যুইটির বোঝা না কমা, ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন অ্যাক্ট ও স্কিম রিভিউ না করা, প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) প্রক্রিয়ার বন্ধ রাখা ও সহজিকারণ না করা, সরকারি ও বহুজাতিক মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না হওয়া, লোকসানে না থাকা সত্ত্বও ব্রোকারেজ হাউসগুলোর বাধ্যতামূলক উৎস কর প্রদান, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বেশি থাকায় বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন না ঘটা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) জনবল সংকটসহ ইত্যাদি সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে এসব সমস্যা কিভাবে কাটি ওঠা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেন অংশীজনরা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আজকের সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী আমাদের কথা শুনেছেন। জানতে চেয়েছেন কি কি করা যেতে পারে। আরো বললেন, সবগুলো ইস্যু একসঙ্গে করে একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে জমা দিতে।’ মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘পুঁজিবাজার ছাড়া ইকোনমি আগাতে পারবে না। বিশেষ করে এলডিসি থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নিত হতে গেলে আমাদের যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে সেগুলো কে যদি আমাদের মোকাবেলা করতে হয় তাহলে শক্তিশালী পুঁজিবাজার ছাড়া কোনো ভাবে সম্ভব নয়। আমাদের দিক থেকে কিছু মেজর ইস্যু নিয়ে কথা বলেছি। বিশেষ করে আমাদের যে নেগেটিভ ইক্যুইটির আছে সেটি প্রভিশনিংয়ের জন্য প্রতি বছর একটু একটু করে কমিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে যাতে শেষ করা যায় সেটি বলেছি। ব্রোকারেজ হাউগুলোর টার্নওভারের ওপর এআইটি কাটা হয় সেটি রেশনালাইজ করার কথাও বলেছি। সরকারি এবং মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে যাতে বাধ্যতামূলক তালিকাভুক্ত করা যায় এবং যাতে তারা এক বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আইপিও নিয়েও অনেক আলোচনা হয়েছে। ভালো আইপিও আনার জন্য আমাদের কি কি করতে হবে, আইপিওর সময় কমাতে হবে, আইপিওর প্রাইজ ডিসকভারিটা মার্কেটের উপর ছেড়ে দিতে হবে।স্টক এক্সচেঞ্জকে আইপিও হ্যান্ডেল করতে দিতে হবে। আমরা অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি। তিনি (ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী) সবগুলো শুনেছেন। তিনি সবগুলো বিষয়ই পজেটিভলি নিয়েছেন। রিকমেন্ডেশনগুলোকে তিনি ১৫ মের মধ্যে একটি অ্যাকশন প্ল্যান করে পুঁজিবাজার উন্নয়ন কমিটির কাছে পাঠানো হবে।’ৎ

তিনি আরো বলেন, ‘এতোদিন সরকারের মধ্যে পুঁজিবাজার নিয়ে যথেষ্ট ফোকাস করার মতো কোনো পারসন ছিল না। এখন থেকে তিনি সরকারের সঙ্গে পুঁজিবাজার নিয়ে ফোকাস করবেন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী জানিয়েছেন, এখন থেকে ক্যাপিটাল মার্কেট সরকারের কাছে কি-প্রাউরিটি পাবে, যার মধ্যস্ততাকারী হবেন তিনি।’

সংস্কার প্রসঙ্গে কি আলোচনা হজয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি একটু ফ্রাস্ট ট্রাকে করতে হবে। অন্তবর্তী সরকার থাকা অবস্থায় যাতে সংস্কারের অধিকাংশই যাতে বাস্তবায়ন করা যায়। সংস্কার কার্যক্রম যাতে দ্রুত হয় সেজন্য তাগিদ দিয়েছেন ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী।’

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘খুবই ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। আমাদের কাছে খুবই পজেটিভ মনে হয়েছে। ক্যাপিটাল মার্কেট না থাকলে তো অর্থনীতি বলতে কিছু থাকে না। ক্যাপিটাল মার্কেট ছাড়া এলডিসি গ্রাজুয়েশন সম্ভব নয়। তাই মার্কেট টিকিয়ে রাখতে প্রথমত ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন অ্যাক্ট ও স্কিম রিভিউ করতে হবে। এটা না হওয়ার কারণে ডিএসইকে অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, আইপিও বাড়াতে হবে। এই দুটি এখনই করতে হবে। আমরা আরো ১১টি বিষয়ের ওপর লিখিত প্রস্তাব দিয়েছি। এসব বিষয় নিয়ে আবারও আলোচনা করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী আমাদের কথাগুলো শুনেছেন। এতে আমার মনে হয়েছে, পুঁজিবাজার নিয়ে একটি বসার জায়গা তৈরি হয়েছে।’

উচ্চ পর্যায়ের এ মতবিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির (সিএসই) চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবদুল মোতালেব, সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) বাবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আ স ম খায়রুজ্জামান, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. সাইফুদ্দিন, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মাজেদা খাতুন, অ্যাসোসিয়েশন এব আাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানি আন্ড মিউচুয়াল ফান্ডসের সহ-সভাপতি ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী, অ্যাসোসিয়েশন অব ক্রেডিট রেটিং এজেন্সির সভাপতি এনকেএ মবিন এফসিএ এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি জনাব রুপালী হক।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে