ঢাকা, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

হয় সাক্ষী, নয়তো আসামি

২০২৫ এপ্রিল ১৭ ০৯:০২:৩৭
হয় সাক্ষী, নয়তো আসামি

অর্থ বাণিজ্য প্রতিবেদক : বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের অযোগ্যতা ও ব্যর্থতায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটিতে গত মাসের শুরুতে নজিরবিহীন ক্রোন্দলের ঘটনা ঘটে। যেখানে বিএসইসির সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একজোট হয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগ চান। যেটাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী কায়দায় ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করে ভয়ের ত্রাস তৈরী করেছেন মাকসুদ কমিশন। এরপরে অন্যসব কর্মকর্তাদেরকে মামলার সাক্ষী হতে চাঁপ দিচ্ছেন। অন্যথায় তাদেরকেও মামলার আসামী করা হবে বলে ভয় দেখানো হচ্ছে।

এই অবস্থায় বিএসইসিতে কাজে স্থবিরতা বিরাজ করছে। বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন মামলা খাওয়ার ভয়ে। আর মামলার পরবর্তীতে তা মোকাবেলায় আর্থিক মন্দাবস্থার কথাও ভাবাচ্ছে তাদের। কারন সৎ অফিসারদের বেতনাদি দিয়ে সংসার চালানোই কঠিন।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার আর্থিক খাতে বিএসইসি ছাড়া সব জায়গাতেই যোগ্য লোককে নিয়োগ দিয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে আশিক চৌধুরী। তাদের যোগ্য নেতৃত্বে ওই দুটি খাত অনেক প্রশংসিত। তবে শেয়ারবাজারে দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও এ খাতটি সবসময় অভাগা। তাই স্বৈরাচারের পতনেও বিএসইসিতে যোগ্য লোকের অভাবে বিনিয়োগকারীদের ভাগ্য খুলেনি। বরং কপাল পুড়েছে।

বিএসইসিতে অচলাবস্থার তৈরী গত ৫ মার্চ থেকে। বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক সাইফুর রহমানকে বিতর্কিতভাবে বাধ্যতামূলক অবসরের পাঠানো প্রতিবাদে ওইদিন কর্মকর্তারা পুরো কমিশনের পদত্যাগ দাবি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিএসইসির প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কমিশনের বোর্ড রুমে চেয়ারম্যান-কমিশনারদের কাছে ৪ দাবি তুলে ধরা হয়। তবে কমিশন তা মানতে অস্বীকার জানায়। এরপরে শুরু হয় চেয়ারম্যান-কমিশনারদের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাকবিতন্ডা।

ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএসইসির ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংস্থাটির প্রধানেরই প্ররোচনায় ন্যাক্কারজনক মামলা করা হয়। গত ৬ মার্চ বিএসইসি চেয়ারম্যানের গানম্যান মো. আশিকুর রহমান বাদি হয়ে শেরে বাংলা নগর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। যার পেছনে কলকাঠি নেরেছেন অযোগ্য হিসেবে খেতাব পাওয়া বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।

এরপরে ১৬ মার্চ সাধারন ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। যেখানে কর্মকর্তাদের নাম ঢুকানো হবে বলেও ভয় দেখানো হচ্ছে।

ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির কিছু কর্মকর্তা অর্থ বাণিজ্যকে বলেন, ৫ মার্চের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান মহোদয় ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে শুরুতেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আওয়ামী কায়দায় ভয়ের ত্রাস তৈরী করেছেন। এখন তিনি সবার ফোন নাম্বার, বাসার বর্তমান ঠিকানা ইত্যাদি ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেছেন। একইসঙ্গে কর্মকর্তাদেরকে সাক্ষী হওয়ার জন্য ব্ল্যাকমেইলিং শুরু করেছেন। সাক্ষী না হলে আসামী করার হুমকি দিচ্ছেন। অবস্থায় বিএসইসিতে সবার মধ্যে ভয় কাজ করছে।

ওই কর্মকর্তারা বলেন, বিএসইসির সব কর্মকর্তা অসৎ না। সৎভাবে আর কয় টাকা বেতনাদি পায় একজন অফিসার। এরমধ্যে যদি মামলা মোকাদ্দমা খেয়ে কোর্টে দৌড়াতে হয়, তাহলে সে টিকবে কিভাবে। সব মিলিয়ে বিএসইসিতে কাজে স্থবিরতা বিরাজ করছে। যা বিএসইসির ইতিহাসে বিরল ঘটনা। এতে করে দীর্ঘমেয়াদে শেয়ারবাজারের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।

বিএসইসির কর্মকর্তাদের আগে থেকেই খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের উপর শেয়ারবাজারের সব খাতের মানুষের ক্ষোভ। সবার মধ্যেই এই কমিশনের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আর প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে বহুদিন বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ-মানববন্ধন করেছেন। এই কমিশনের যোগ্যতা নেই বলে পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। তারপরেও চেয়ার আকঁড়ে ধরে রেখেছেন রাশেদ মাকসুদ। বিনিয়োগকারীসহ শেয়ারবাজারের সব ক্ষেত্রের মানুষ তাকে না চাইলেও তিনি যাবেন না। অথচ সামান্য সমালোচনা উঠতেই মাসরুর রিয়াজ বিএসইসিতে যোগদানই করেননি।

এতো কিছুর পরেও রাশেদ মাকসুদের চেয়ার আকঁড়ে ধরে রাখায় তার ক্ষতি না হলেও প্রতিদিন পুঁজি হারাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। ধংসের পথে বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান। অথচ আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পরে ও মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন পূণ:গঠনের আগে শেয়ারবাজারে অনেক ভালো হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল। যা পরবর্তীতে বিএসইসিতে যোগ্য লোকের অভাবে সম্ভব হয়ে উঠেনি।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে